সিরাজউদ্দৌলা
১৯৭১ সাল। যুদ্ধে উত্তাল পূর্ব বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির উপর অকথ্য নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বাঙালি বিভক্ত হয়ে গেছে একাধিক দলে। এক দল যোগ দিয়েছে পশ্চিমাদের পক্ষে, অন্য দল বুক চিতিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করছে। এরই মধ্যে পনেরো বছর বয়সের রিপন যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীতে। বয়স কম হওয়ায় অস্ত্র ধরার অনুমতি পায়নি সে। কিন্তু হানাদার বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অস্ত্র আনা-নেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার ও ওষুধ সরবরাহ, পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহের মতো গুরত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রিপন করে চলে সাহসিকতার সঙ্গে।
ক. সিরাজউদ্দৌলা কলকাতার কী নামকরণ করেন?
খ. “একটা দিন মাত্র, একটা দিনও যদি ওই মসনদে মাথা উঁচু করে আমি বসতে পারতাম।”— বুঝিয়ে লেখো
গ. উদ্দীপকের রিপনের সাথে 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে তা আলোচনা করো।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটক উভয়ই অস্থির সময়কে ধারণ করে।”—উক্তিটি সম্পর্কে তোমার অভিমত পর্যালোচনা করো।
উত্তরঃ
ক) সিরাজউদ্দৌলা কলকাতার নামকরণ করেন আলিনগর ।
খ) প্রশ্নোক্ত বাক্যটি দ্বারা বাংলার সিংহাসনে মিরজাফরের মাথা উঁচু করে বসার ক্ষিপ্ত আবেগ প্রকাশিত হয়েছে। মিরজাফর সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি। কিন্তু অতিরিক্ত লোভের কারণে সিরাজের শাসনকে সে মেনে নিতে পারেনি। সিরাজের জায়গায় নিজে সিংহাসনে বসার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করেছে। ষড়যন্ত্রের একপর্যায়ে জগৎশেঠ, রাজবল্লভসহ অন্যদের সাথে আলোচনার সময় মিরজাফর প্রশ্নোক্ত বাক্যটি বলে তার সিংহাসনে বসার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।
উত্তরের সারবস্তু: সিরাজের জায়গায় নিজে সিংহাসনে বসার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন মিরজাফর।
গ) উদ্দীপকের রিপনের সাথে 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের নারান সিং চরিত্রের মিল রয়েছে। মালোচা নাটকে নবাব সিরাজের গুপ্তচর হয়ে কাজ করত নারান সিং। সে রাইসুল জুহালা নাম ধারণ করে ছদ্মবেশে নবাবের বিরুদ্ধে যন্ত্রকারীদের সাথে সখ্য গড়ে তুলেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, তথ্য জেনে নবাবকে পরিস্থিতির ব্যাপারে সচেষ্ট করা।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে যে, ১৯৭১ সালে পূর্ব বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হলে বাঙালি দুইভাগ হয়ে যায় । কেউ পশ্চিমাদের পক্ষে, কেউ অল্পবয়সি রিপনের মতো মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়। অস্ত্র ধরার অনুমতি না থাকলেও সে মুক্তিবাহিনীকে নানাভাবে সাহায্য করে। হানাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অস্ত্র আনা নেওয়া, মুক্তিবাহিনীদের কাছে ওষুধ ও খাবার সরবরাহ, হানাদারবাহিনীর গোপন তথ্য সংগ্রহের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে চলে সে। আলোচ্য নাটকে রাইসুল জুহালা তথা নারান সিং ছিলেন নবাবের পক্ষের গুপ্তচর। উদ্দীপকের রিপন যেমন গোপনভাবে মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করে তেমনি নাটকের নারান সিংও গোপনভাবে নবাবকে সাহায্য করেছিল। সুতরাং বলা যায়, রিপন আলোচ্য নাটকের নারান সিং চরিত্রের প্রতিনিধি ।
উভয়ের সারবস্তু: "সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে নারান সিং গোপনীয়তা রক্ষা করে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে মিশে তথ্য নিয়ে সিরাজকে সহযোগিতা- কর বিষয়টি উদ্দীপকেও লক্ষণীয়।
ঘ) ঘটনার ভিন্নতা থাকলেও উদ্দীপক ও 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের সময়কাল উভয়ই ছিল বাংলার উত্তাল সময় । আলোচ্য নাটকে পলাশি যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। নবাবের শোচনীয় পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হতে দেখা যায় এ নাটকে।
উদ্দীপকে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা নানাভাবে পূর্ব বাংলার মানুষদের ওপর অত্যাচার- নির্যাতন করেছে। পাকিস্তানিদের আক্রমণে তখন পূর্ব বাংলার অবস্থা ছিল অস্থির। চারিদিকে শুধু মৃত্যু আর মৃত্যু। আলোচ্য নাটকেও শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আমত্যবর্গের ষড়যন্ত্রে বাংলার স্বাধীনতা বিপন্ন হওয়ার চিত্র লক্ষ করা যায়।
আলোচ্য নাটকে বাংলার অস্থির সময়ের চিত্র দেখা যায়। স্বজন ও সভাসদদের পুনঃপুন ষড়যন্ত্রে নবাব সিরাজের শাসনকার্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছিল । রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে নবাব ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে সেখানে তিনি প্রধান সেনাপতি ও অন্যান্য অমাত্যদের বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। ফলে বাংলার স্বাধীনতা ইংরেজদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে। এদিকে, উদ্দীপকেও মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থির সময়ের চিত্র পাওয়া যায়। এসব বিচেনায়, আলোচ্য মন্তব্যটিকে যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়।
উত্তরের সারবস্তু: 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটক ও উদ্দীপকে বিদেশি শক্তির আক্রমণ, স্বজাতির বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের শিকার বাংলা মায়ের অস্থির সময়ের কথা বর্ণিত হয়েছে।