1. ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে দেবীর পূজায় পশু বলিদান বহু বৎসরের চিরাচরিত প্রথা। ভিখারিনী বালিকা অর্পণা প্রথম এ প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। তার স্নেহের পুত্তলি ছাগশিশুকে মায়ের পায়ে বলি দেয়ার উদ্দেশ্যে ধরে আনলে বালিকা করুণাবিগলিত চিত্তে রাজার কাছে পশুবলির প্রতিবাদ জানায়। রাজা গোবিন্দমাণিক্য সেই দিনই মন্দিরে মায়ের পূজায় জীব বলির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এতে ব্রাহ্মণত্ব তথা মন্দিরের প্রভুত্ব হারানোর ভয়ে পুরোহিত রঘুপতি ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ে। 'দেবী রাজরক্ত চায়' এই বলে রাজা গোবিন্দমাণিক্যকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে, প্রস্তর প্রতিমার মুখ ফিরিয়ে দেয়। শেষপর্যন্ত রাজা গোমিন্দমাণিক্যের প্রেমশক্তির কাছে রঘুপতিকে হার মানতে হয়। কারণ বিশ্বমাতার পূজা প্রেম দ্বারাই হয়। (সূত্র: বিসর্জন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
2. ব্রিটিশ বিচারক কিংসফোর্ড যখন ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের কারণে অকারণে শান্তি দিচ্ছিলেন তখন তাকে মারার ব্যর্থ চেষ্টা করেন ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী। কিংসফোর্ডের গাড়িতে বোমা মারতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পথে আটক হন ক্ষুদিরাম। তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয় ১১ আগস্ট ১৯০৮ খ্রি.। ক্ষুদিরামের পক্ষের আইনজীবী উপেন্দ্রনাথের ভাষ্যমতে, “ফাঁসির মঞ্চে ক্ষুদিরাম নির্ভীকভাবে উঠে যান। তাঁর মধ্যে কোনো ভয় বা অনুশোচনা কাজ করছিল না। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন।
3. পোস্টমাস্টার কলকাতার ছেলে, চাকরিসূত্রে কলকাতায় আসা। কর্মক্ষেত্রে তেমন কারো সাথে মেলামেশা হয়ে উঠে না। কাছের মানুষ বলতে অনাথিনী বালিকা রতন, যে তাকে যত্ন করে খাওয়াত। পোস্টমাস্টার অবসরে রতনের সাথেই গল্প জমিয়ে তুলতেন তা সে বুঝুক আর না বুঝুক। এমন করে তাদের মধ্যে একটি হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরি হয়। হঠাৎ একদিন পোস্টমাস্টারের বদলির সংবাদ আসলে রতন ভেঙে পড়ে, পোস্টমাস্টারেরও খারাপ লাগছিল। কলকাতার উদ্দেশ্যে নৌকায় উঠার পর একবার নিতান্ত ইচ্ছা হইল, 'ফিরিয়া যাই, জগতের ক্রোড়বিচ্যুত সেই অনাথিনীকে সঙ্গে করিয়া লইয়া আসি।' পরক্ষণেই নদীপ্রবাহে ভাসমান পথিকের উদাস হৃদয়ে এই তত্ত্বের উদয় হইল, জীবনে এমন কত বিচ্ছেদ, কত মৃত্যু আছে, ফিরিয়া ফল কী। পৃথিবীতে কে কাহার। (সূত্র: পোস্টমাস্টার- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
4. হবিগঞ্জ শহরের মাহমুদাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শিরিন আক্তার। স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর বাড়ি ফিরে দেখেন এলাকার অনেক শিশু বিভিন্ন কারণে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। বিদ্যালয়ে যেতে অনাগ্রহী কিংবা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া এসব শিশুকে পড়াশুনায় ফিরিয়ে আনতে ২০১৭ সালে শেষদিকে নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন 'মায়ের মমতা অবৈতনিক বিদ্যালয়'। মায়ের মমতা দিয়েই তিনি শিশুদের পড়াশুনা শেখান। অথচ আমাদের দেশের কত শিক্ষক অধিক উপার্জনের জন্য শ্রেণিকক্ষে না পড়িয়ে প্রাইভেট পড়াতে অধিক উৎসাহী।
(সূত্র: ১০ নভেম্বর, ২০১৯- প্রথম আলো)
5. দাঙ্গাকবলিত ঢাকা শহরের সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারের সন্তান মোর্শেদ বোনের জন্য বই কিনতে গিয়ে দাঙ্গাবাজ হিন্দুদের হাতে ধরা পড়ে। এ ঘটনার রেশ ধরে মোর্শেদের বাবা ও ভাই হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমনই এক বিরুদ্ধ পরিবেশে জনৈক হিন্দু ডাক্তার প্রাণ বাঁচাতে মোর্শেদদের বাড়িতেই আশ্রয় নেয়। এই পরিবারের মুমূর্ষু ছোট খোকাকে চিকিৎসা করে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পর্দানশীল সম্ভ্রান্ত গৃহকর্ত্রী তাকে মশারির নিচে লুকিয়ে রেখে তার খোঁজে আসা পাড়ার লোকদের হাত থেকে রক্ষা করেন। মেজ ছেলে ফরিদ মশারির নিচের লোকটি কে? জানতে চাইলে হিন্দু ডাক্তার উত্তর দেয় 'আমি মানুষ'।