বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ও ১০ টি টিপস

Author
27/01/2024Chorcha
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ও ১০ টি টিপস

যুদ্ধের দামামা কিন্তু বাজতে শুরু করেছে!!

না! বিশ্বযুদ্ধ না। কিন্তু তোমার জীবনের গতিপথ নির্ণয়ে এ এক মহাযুদ্ধ ই বলা চলে। এই এক যুদ্ধের ফলাফল ই বলে দিবে, তোমার স্বপ্ন সত্যি হবে কি না।

যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে চলেছো, একটু দাঁড়াও! খেয়াল করেছো কি? বর্তমান সময়ে, ভর্তি পরীক্ষাকে শুধুমাত্র একটি পরীক্ষা হিসেবে নয়, বরং এটি একটি যুদ্ধ হিসেবেই কিন্তু ভাবতে হচ্ছে। তোমরাও এই যুদ্ধের যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করতে চলেছো। তাই তোমার সঠিক রণকৌশলে উন্নত হতে হবে। একজন যোদ্ধা তার শত্রুকে হারিয়ে দেতে শুধু ভালো অস্ত্র নিয়েই সফল হয় না,ভালো কৌশল ও লাগে। ঠিক তেমন ই, শুধুমাত্র পড়ালেখার প্রস্তুতি নিয়েই ভালো ফলাফল প্রাপ্ত করা সম্ভব নয়। তাই যতটুকু পড়েছো, সেটি যাতে কাজে লাগতে পারো তার দিকে মন দিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এই লক্ষ্যেই তোমার এই প্রয়াস।

পড়ালেখা করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে!

এটা বর্তমান সময়ের সাথে একদম ই মানায় না। যে পড়ালেখা করে, আর যে করেনা, সবার ই একসাথে বসে থাকতে হয়। কোথায়? আর কোথায়? রাস্তার লম্বা জ্যামে। তাই এর থেকে আমরা এই বলতে পারি “কৌশলের সাথে প্রস্তুতি নেয় যে, সফল হয় সে“। তাহলে একটু ভেবে দেখি, কি কি কৌশল অবলম্বন করা যায়?

পরীক্ষার আগের রাতে তোমার করণীয়

  • পরীক্ষার আগের রাতে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রগুলি চেক করে ফাইলে উঠাও। আগের রাতে বেশি চিন্তা না করাই ভালো।

  • যা তুমি ২ বছরে পারোনাই তা ১ রাতে শেষ করবে? এত অলৌকিক ক্ষমতা কোথায় পেলে? আর এখন বই ধরলেই এমন মনে হবে “হায়হায়! যা দেখি নতুন লাগে“ । তার চেয়ে ভালো ভালো আশা করে ঘুমাতে যাও, এতে আর কিছু না হোক ভয় বা নারভাসনেস টা থাকবেনা।

  • মোটেও রাত জাগবে না। যত দ্রুত সম্ভব,ঘুমিয়ে পড়বে।

তুমি একা না,সব শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় পরীক্ষাভীতি কাজ করে।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই একটা দুশ্চিন্তা কাজ করতে থাকে। অনেক শিক্ষার্থী হয়তো পরীক্ষার সময়ে মাথার ঘোরে থাকে। পরীক্ষা হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই তাদের মানসিকভাবে একটা অস্বাস্থ্যকর দুশ্চিন্তা যে শুরু হয়, তা চলতে থাকে, চলতেই থাকে। এবং পরীক্ষার দিন এসে তাদের মাঝে নানান ধরনের ভীতি দেখা যায়। এ কারণে অনেকে পরীক্ষায় কিছু ভুল করে ফেলতে পারে।

যতটা সম্ভব আগে আগে পরীক্ষা স্পটে হাজির হও।

তাইলে তোমার সহযোদ্ধাদের দেখলে বুঝতে পারবে, তারা পাশের কোনো গ্রহ-নক্ষত্রের কেউ না, তারাও মানুষ। আর পরীক্ষার হলে আগে পৌছালে তুমি পরীক্ষার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে পারবে। পরীক্ষার সময়টুকু ভালো কাটবে। বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট পরে হলে ঢুকে দেখো (আবার চেষ্টা করতে যেও না) বুকের ধুকপুকুনি তে নিজের দাদার নামো ভুলে যাবে। তখন আবার চর্চার নাম বলো না যেন।

পৃথিবী উলটে গেলেও আগে নিজের রোল ঠিকমতো ফিল আপ করবে খাতায়

উত্তরপত্র পাবার পর সবার আগে রোল নাম্বার টা ফিল-আপ করো। আর বাদ বাকি ইনফো গুলাও ঠিক ভাবে বসাও। কারন এগুলা ভুল গেলে ১০০% মার্কেও তোমার সিরিয়াল আসবেনা।

কি? ঘাবড়ে গেলে? ঘাবড়ানোর মতোই বিষয় এটা।

তবে ভয় টা একটু কমিয়ে দেই। পরীক্ষার হলে অনেকে ভুলে রোল রেজিস্ট্রেশন নম্বর না লিখে আসতেই পারে। Man is mortal-মানুষ মাত্রই ভুল (এটা মোটেও সঠিক অনুবাদ না, ইচ্ছা করে লিখেছি, যাতে একটু ভয় কমে)

তবে ভয় নেই, যেকোনো একটা ইনফো সঠিক থাকলেই হবে। সেটা দিয়েই বের করবে। তবে ভুলেও সেট কোড ভুল দাগাবে না। তাইলে আমার কিছু করার নেই, নিজের কবর নিজেই খুঁড়বে ।

প্রশ্নটা ঠিকভাবে পড়বে

আমরা অনেকেই একটা কাজ করি, সেটা হল প্রশ্ন পুরোটা না পড়েই দাগানো শুরু করে দেই। এটা কখনই উচিত না। কারন তুমি যদি সময় নিয়ে আগে পুরো প্রশ্নটা না পড় তাহলে উত্তরটা তুমি ঠিকভাবে সব দাগাতে পাড়বে না। এমনও হতে পারে সহজ নৈর্ব্যক্তিক বাদ দিয়ে কঠিন তা নিয়ে বসে আছো তাই প্রশ্নটা দেওয়ার পর সবটা প্রশ্নটা একনজর দেখবে। তারপর যেই প্রশ্নটা দাগাবে তার উত্তর কি হবে সেটা একটু চিন্তা করে তারপর বৃত্ত ভরাট করবে।

প্রশ্নের মানবন্টন না দেখা

আমরা সবচেয়ে বেশি যে ভুলটা করি তা হল প্রশ্নের মানবন্টন টা না দেখেই দাগানো শুরু করে দেই।বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু অপশনাল বিষয় এর বদলে অন্য বিষয় দাগানোর সুযোগ থাকে। পরে দেখা গেল , তুমি অপশনাল সাবজেক্ট এর প্রশ্নোত্তর পারছো না, কিন্তু সেটার বদলে অন্য যেসব দাগাতে পারতে, সেগুলো সোজা। তাই সবসময় প্রশ্নের মানবন্টন আগে দেখা উচিত।

প্রশ্ন হাতে পাবার পর ভেবে নাও তোমার হাতে অনেক সময় । তাই বেশি তাড়াহুড়ো না করে প্রশ্ন পুরোটা দেখে নাও। এবার শুরু থেকে শুরু করবে না শেষ থেকে শুরু করবে তা তোমার বিষয়।

সময়ানুবর্তীতার বিকল্প নেই

আর হ্যা, একটা কথা সব সময় চেষ্টা করবে ১০০% উত্তর করার। তোমরা বেশির ভাগ সময় যেটা করো তা হলো,১ম ২০-৩০ টা প্রশ্ন খুব ভালোভাবে ভেবে চিন্তা করে দাগাতে গিয়ে শেষের দিকের প্রশ্নগুলো অভাগার মতো বাদ পড়ে যায়। যা তোমার মার্ক অনেক কমিয়ে দেবে। কিন্তু তুমি যদি প্রথম থেকেই সবগুলো মোটামুটি লেভেল করে দাগাও তাহলে সবগুলো প্রশ্ন ই দাগাতে পারবে।

অনেক বুড়োমি করলাম, এবার কাজের কথায় আসি চলো।

  • দাগানো শুরুর পর যে বিষয় টা তুমি ভালো পারো সেটা দাগাতে শুরু করো। আর যেটা দাগানো হয়ে গিয়েছে সেটা নিয়ে ২য় বার ভাববে না, কারণ যা গিয়েছে, গিয়েছে।

  • আর যেটা দাগাবে অবশ্যই সেই প্রশ্নটার পাশে একটা ছোট চিহ্ন দেবে, অনেক ছোট। যাতে ২য় বার ওই প্রশ্ন পড়া না লাগে।

হ্যা, শিওর গুলো দাগানো শেষ। এখন?

  • শিওর গুলা দাগানো হয়ে গেলে এবার আরেক দফা দাগাও দেখবে আরো কিছু কনফিউজড প্রশ্ন পেরে যাবে, যা হয়তো প্রথমবারে শিওর ছিলে না, যে বাংলাদেশের রাজধানী আসলে কোনটা? ঢাকা? নাকি পুরান ঢাকা?।

এবার হালকা কনফিউশনের গুলাও বাদ যাবে কেন?

তবে হ্যা, যদি দেখো যে মার্ক পেয়ে চান্স পাওয়া সম্ভব সে মার্ক তোমার দাগানো গুলা দিয়ে হবেনা। তখন হালকা কনফিউশন গুলাও দাগাও। জয় বাংলা! যা থাকে কপালে।

এবার দাগানো শেষ হোক না হোক, তোমার সময় শেষ। শেষ একটি বারের মত রোল ও অন্যান্য তথ্য দেখে নাও। মানে মিলিয়ে নাও।

আমরা অনেকেই আছি যারা কিনা পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই পরীক্ষার হল ত্যাগ করি। পরীক্ষা শেষে খাতাটা রিচেক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন খাতায় অনেক ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। রিভাইজ করার মাধ্যমে ছোটখাট ভুলগুলো দূর করা যায়।

পারো আর না পারো, কোনো নকল বা কিছু নিবে না।

এটা একটা বদঅভ্যাস নকল বলতে যে টুকরো কাগজ দেখে লেখা,তা নয়। অন্যেরটা দেখে লেখাও এক ধরনের নকল। তবে সে যাই হোক এটা করা কখনই ঠিক নয়। একটা ছোট উদাহরণ দেই – মনে কর তুমি ছোট কাগজে কয়েকটা শর্টকাট নিয়ে গেলে। এখন কথা হচ্ছে তুমি যদি এটা দেখে লিখতে গিয়ে ধরা পরো তাহলে পরীক্ষাটা বাতিল হয়ে যাবে। সাথে সবার সামনে তোমার সম্মানহানি হবে।

সময় শেষ হলে মোটেও উত্তরপত্র নিয়ে শিক্ষকের সাথে Tug of war খেলবেনা।

মনে রাখবে, তোমার প্রতিটা পদক্ষেপ তোমার স্বপ্নের পথে এককটা পদক্ষেপ। একটা ভুল ই তোমার স্বপ্ন কে চুরমার করে দিতে পারে। এবার বলো , তুমি কোনটাতে রাজি? বাকি থাকলে থাকুক, উত্তরপত্র জমা দিয়ে দিবে? নাকি Tug of war খেলে silently expelled হবে?

পরীক্ষা শেষ তো? খুব ভালো কথা যেটা হয়ে গেছে সেটা তো গেছেই। তাই ওইটা নিয়ে আর ভাবনা চিন্তার কাজ নাই। পরের পরীক্ষা নিয়ে ভাবো।

সবশেষে একটাই কথা,

শিক্ষার্থীদের অবশ্যই উচিত ভর্তি পরীক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। এজন্য বিগত বছরের এডমিশন প্রশ্নব্যাংক এর উপর সর্বোচ্চ প্র‍্যাক্টিস থাকা জরুরি। এরজন্য অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম হতে পারে চর্চা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক সকল শিক্ষার্থীকে অগ্রীম শুভকামনা।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

Get it on Google PlayDownload on the app store

© 2024 Chorcha. All rights reserved.