সেকেন্ড টাইমঃ ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ

Author
08/07/2024Syed Taisur Rahman Fayaz
সেকেন্ড টাইমঃ ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ

প্রতিবছর দেখা যায়, একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ১ থেকে ১.৫ লাখ পরীক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামান্য কয়েকটা সীট এর জন্য লড়াই করে । কিন্তু বেশিরভাগ ই হেরে যায় এ যুদ্ধে। হ্যা, ভর্তিযুদ্ধের কথাই বলছি। যারা পরাজিত হয়, দেখা যায়, অনেকের বাবা-মা তার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেয়, অনেকে টিটকারি শুনতে শুনতে জীবনের আশা ই হারিয়ে ফেলে। এই ই কী তবে নিয়তি? একবার হেরে গিয়েছি দেখেই কি আমার উদ্যম উৎসাহ কমে গিয়েছে?

আসলে, এসব ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের মন খারাপ, গার্লফ্রেন্ডের মুখ ভার, অন্যদের টিটকারি—এসবই তেমন কোনো ব্যাপার না। আসল ব্যাপারটা হলো তুমি। তুমি ভর্তি হতে পারোনি, তোমার উদ্যম, উৎসাহ কমে গেছে। না, এমনভাবে বলো না। বরং স্বীকার করো, তুমি নিজেই তোমার উদ্যম কমিয়েছ।

এক্সাম এ বাদ পড়েছ, সেটা নেগেটিভলি দেখছ। তুমি যে এই যুদ্ধে দাঁড়াতে পেরেছ, সেটা পজিটিভলি দেখনি। এটা তোমার ভুল ছিল। তোমার চিন্তা করা উচিত ছিল, “এ পর্যন্ত যেহেতু পেরেছি, আমি ভর্তি পরীক্ষাতেও পারবো।” তুমি সেটা ভাবোনি। সেটা তোমার দায়। সেই দায় স্বীকার করো। পাশ কাটানোর চেষ্টা করো না।

বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক, আমার মনে হয় ৯৫% ছেলে-মেয়ে সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিতে গেলে, ফেল করে। কেনো করে, সেটা খুবই সিম্পল। লম্বা সময় পেলে, শুরু করতে করতেই অনেক দিন চলে যায়। একদিন পড়লে, পাঁচ দিন খবর থাকে না। দেড় দুই মাস গেলে মনে হয়, “পরের সপ্তাহ থেকে একদম নতুনভাবে শুরু করবো।” দুদিন পরে সেটাও টেকে না। এইভাবে সময় চলে যায়। ধীরে ধীরে মনে ভয় ঢুকে যায়, “এইবার যদি না পারি।” এইবারই তো শেষ চান্স। সেই ভয়ের কারণে পড়তে বসলে মন টেকে না। কোচিং-এ ভর্তি হলেও, কারেন্ট ব্যাচের সাথে মিলিয়ে নিতে লজ্জা লাগে, ফলে আগের চাইতে খারাপ অবস্থায় পড়ে যাও। ভিতরে ফ্রাস্ট্রেশনের সাইজ ক্রমশই বাড়তে থাকে।

নতুন যারা পাশ করবে, তারা যদি এইবার পড়ে চান্স পেতে পারে, তুমি কেনো পারবে না? তোমাকে তো আর সিড়ির নিচে বিড়ির দোকান থেকে কুড়িয়ে আনেনি।

সো, তোমাকে অভিনয় করতে হবে। ভাবো, এক মাস পরে ভর্তি পরীক্ষা। এখন আর বেশি দিন সময় নেই। তাই, চার সপ্তাহের মধ্যে প্রিপারেশন নিতে হবে। দ্রুত বই খাতা বের করে প্রিপারেশন শুরু করো। সব সাবজেক্টের প্রিপারেশন নিতে হবে। হয়তো জানুয়ারি মাসের যেই ভর্তি পরীক্ষা (যেটা তুমি নিজে ঠিক করেছ), সেটার জন্য ফিজিক্সের সব চ্যাপ্টার ভাজা ভাজা করতে যাবা না। খালি প্রথম পেপারের প্রথম দশ চ্যাপ্টার। পরের মাসে, প্রথম পত্রের বাকি চ্যাপ্টার। এইভাবে নিজেকে বোকা বানিয়ে কৃত্রিম প্রেশার তৈরি করতে পারলে, দুই মাস পরে নিজেই টের পাবে কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে। কনফিডেন্স লেভেল হাই হয়ে যাবে।

তখন বাবা-মায়ের মন খারাপ নিয়ে টেনশন করতে হবে না। কাজের দ্বারা, তাদের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনতে পারবে। চিন্তা বা হতাশা করে তাদের কষ্ট না বাড়িয়ে, নিজের উন্নতির দিকে মন দাও।

অনেক মোটিভেশন (পড়ো , মুতি-ভাষণ ) গেল, এবার আসো ডিসকাস করি, কি কি করা যায়

নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা

প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ার পর আমাদের সবচেয়ে প্রথম কাজ হওয়া উচিত নিজের ভুলগুলো চিহ্নিত করা। “বাংলা নিয়ে হেলাফেলা করা একদম উচিত হয়নি।” —এই উপলব্ধি থেকে ভবিষ্যতে আরও মনোযোগী হওয়া যায়। বায়োলজি ভালোভাবে পড়লে অন্তত কিছু একটা করতে পারতাম—এই উপলব্ধি থেকে বায়োলজিতে বিশেষ মনোযোগ দেয়া যেতে পারে। অতএব, প্রথমবারের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয়বারের প্রস্তুতির জন্য নতুন পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত।

পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি

দ্বিতীয়বারের প্রস্তুতির জন্য সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোন বিষয়ে দুর্বলতা ছিল, সেটা চিহ্নিত করে তা আরও ভালোভাবে পড়া উচিত। যেমন, বায়োলজিতে দুর্বলতা থাকলে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে সেই বিষয়টি ভালোভাবে আয়ত্ত করা উচিত।

রাবি,জাবি,চবি,মেডিক্যাল,গুচ্ছ,কৃষি প্রশ্নব্যাংক, মডেল টেস্ট, মক টেস্ট, ডাউটস এসবে বারবার প্র্যাক্টিস করে নিজেকে শাণিয়ে নাও

মনের দৃঢ়তা

হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পারিবারিক চাপ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মজবুত করে নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হবে। "আব্বু আম্মুর মুখের দিকে তাকানোই যাচ্ছে না। কী করবো ভেবেই পাচ্ছি না"—এই মনোভাব দূর করে নতুন করে শুরু করার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশের বাসার আন্টি কিংবা প্রতিবেশী আর আত্মীয়স্বজনদের কটূক্তি উপেক্ষা করে, আপনি আবারও চেষ্টা করতে পারেন।

সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা দ্বিতীয়বারের জন্য সুযোগ দেয়। যেমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালস্ (BUP), ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলোজি (IUT), এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে আপনি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পেতে পারেন।

যেমনঃ

  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (JU), সাভার, ঢাকা।

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়

  • বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালস্ (BUP) মিরপুর, ঢাকা ।

  • ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলোজি (IUT) গাজিপুর।

  • শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, (SAU), আগারগাঁও, ঢাকা।

  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU), ময়মনসিংহ।

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BSMRAU), গাজীপুর।

  • সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (SAU), সিলেট।

  • চট্টগ্রাম  ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় (CVASU), চট্টগ্রাম।

  • খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (KU)।

  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (BU)।

  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (COU)।

  • ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (IU) , কুষ্টিয়া।

  • বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (BRUR), রংপুর।

  • জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (JKKNIU), ময়মনসিংহ।

  • শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), সিলেট।

  • পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (PSTU), পটুয়াখালী।

  • নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয় (NSTU), নোয়াখালী।

  • পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (PSTU), পাবনা।

  • হাজী মোহাম্মাদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (HSTU) দিনাজপুর।

  • যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST), যশোর।

  • মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (MBSTU), টাঙ্গাইল।

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BSMRSTU), গোপালগঞ্জ।

মেডিকেল প্রস্তুতি

আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ সহ সকল মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকছে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা আরেকবার যাচাই করে দেখতে পারো। কিন্তু বুদ্ধিমানের কাজ হবে সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতির পুরো সময়টুকুতে second time মেডিকেল প্রস্তুতি এর পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও সেরে ফেলা। এতে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়। এসব মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে দ্বিতীয়বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থী হিসেবে আপনার ৫ নম্বর কাটা যাবে। কিন্তু এতে হতাশ হবার কিছু নেই। যদি আপনার লক্ষ্য ঠিক থাকে এবং সেই অনুযায়ী পরিশ্রমও যথাযথ হয়, তাহলে ৫ নম্বর কাটা গেলেও আপনার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা অবশ্যই কাটা পড়বে না।

স্মার্ট স্টাডি টেকনিক

"Study smart, not hard."—এই কথাটি মাথায় রেখে পড়াশোনা করতে হবে। নিমোনিকের সাহায্য পঠিত বিষয় সহজেই মনে রাখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মনে রাখার জন্য একটি নিমোনিক হতে পারে "দুই তিন টি ফিতা পড়লে কিউট শিলাকে আসলেই পরীর মতো লাগে" এখানে:

দুই -দ্বি-পার্শ্বীয় প্রতিসম

তিন টি-ত্রিস্তরী

ফিতা -ফিতার ন্যায় গঠন

কিউট- কিউটিকল

শিলাকে-শিখাকোষ

আসলেই- এসিলোমেট

পরীর-প্ল্যানেরিয়া (উদাহরণ)

বলো তো দেখি, এটা কিসের বৈশিষ্ট্য ??

কাজেই যেই বিষয়ই পড়া হোক না কেন, পড়া হতে হবে স্মার্টভাবে। কিছু কৌশল মাথায় রেখে পড়তে বসলে পড়াশোনা সহজ হয়ে যায়।

প্রস্তুতির সময় নির্ধারণ

দৈনিক কতক্ষণ পড়াশোনা করবে তার একটি রুটিন তৈরি করা উচিত। রুটিনের উদ্দেশ্য থাকবে, “ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং কিংবা অন্য যতসব কাজই থাকুক না কেন, রুটিনের সময়টুকু ঠিকঠাকমতো পড়বো।” এক্ষেত্রে ফোকাস থাকাটা খুবই জরুরি।

সমসাময়িক টপিকের উপর জোর দেয়া

গতবার যেই টপিকগুলোকে “কঠিন” ভেবে বাদ দিয়েছিলে এবার শুরুতেই সেই টপিকগুলোকে আয়ত্ত করা উচিত। এভাবে প্রতিটি বিষয়ের সবগুলো টপিক আয়ত্তে আনতে পারলে দ্বিতীয়বার ভর্তি প্রস্তুতির দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবে।

আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা

“এত শত প্রতিযোগীদের ভিড়ে আমি পারব কি পারব না” এমন চিন্তা স্রেফ অজুহাত ছাড়া আর কিছুই না। ফার্স্ট টাইমারদের থেকে তুমি অনেকটাই এগিয়ে আছো, যদি সঠিকভাবে দ্বিতীয়বারের প্রস্তুতি নাও। আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে এগিয়ে চলো।

প্রথমবারের ভুল থেকে শিক্ষা

প্রথমবার ভর্তি প্রস্তুতিতে হয়তো আপনার ফোকাস, মানসিক প্রস্তুতি কিংবা প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব ছিল। তাই পরিশ্রম করেও ফলাফল হয়েছে শূন্য। দ্বিতীয়বারের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। Second time এর সিদ্ধান্ত নিয়ে, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যদি পড়াশোনাটাই না করা হয় তাহলে সবই বিফলে গেল। তুমি মনে করতেই পারো যে second time ভর্তি প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় আছে, আস্তে ধীরে প্রস্তুতি শুরু করবে। কিন্তু নির্মম সত্যটা হল, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তোমাকে ফাঁকি দিয়ে সময় অনেক দ্রুত চলে যাবে, আর তুমি সেই “হতাশাগ্রস্ত তুমি” রয়ে যাবে। কাজেই বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে ফার্স্ট টাইম হারের পরই second time ভর্তি প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া।

অনলাইন রিসোর্সের ব্যবহার

জনপ্রিয় কিছু অনলাইনভিত্তিক শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। যেমন, চর্চার মাধ্যমে দ্রুত প্র্যাক্টিস,মক টেস্ট, ডাউটস, মডেল টেস্ট কিংবা বিগত বছরের প্রশ্নপত্রের উপর পরীক্ষা দিয়ে প্রস্তুতিকে ঝালাই করে নেওয়া যেতে পারে।

সময় ব্যবস্থাপনা

দ্বিতীয়বারের প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় রয়েছে, তাই এটি ব্যবস্থাপনা করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সময় চলে যেতে পারে, তাই ফার্স্ট টাইম হারের পরই দ্বিতীয়বারের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

মনের শক্তি

স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ছয়বার চেষ্টা করে সপ্তমবারের সময় ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হন। আপনার হয়তো সাতবার চেষ্টা করার সুযোগ নেই, কিন্তু রবার্ট ব্রুসের মতো আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রমী মনোভাব অবশ্যই আপনার আছে।

সেই আত্মবিশ্বাসে বিশ্বাস রেখে আবারও চেষ্টা শুরু করুন। আপনার এই “আরেকবার চেষ্টার” সফল গল্পটি হয়তো হতাশ হয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা কোনো দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার্থীর মনে শতবার অনুপ্রেরণা যোগাবে, শেখাবে আরেকবার হাল ধরতে।

এবার আসি কিছু টিপস এ (যা আমি ই মানিনা, কারন আমি প্রচুর আলসে)

১. পড়ার মাঝে বিরতি নাও:

একটানা অনেকক্ষণ পড়ার চেয়ে বিরতি দিয়ে পড়া অনেক বেশি কার্যকর। এক নাগাড়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পড়লে পড়ায় মনযোগ ধরে রাখা যায় না। এ কারনে টানা অনেকক্ষণ না পড়ে প্রতি ২০-২৫ মিনিট পর পর পড়ার মাঝে অন্তত ৫ মিনিট বিরতি দিন। বিরতি নেওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পড়া খুব সহজেই আয়ত্ত করা যায়।

২. রুটিন বানিয়ে পড়ো:

সঠিক প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন সঠিক সময় নির্দেশনা। তাই রুটিন করে পড়া অত্যন্ত জরুরি্। প্রতিটি বিষয়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় ভাগ করে নিয়ে একটি টাইম রুটিন তৈরি করে ফেলুন। এতে করে সকল বিষয় যেমন সমান গুরুত্ব দেয়া যায় তেমনি পড়াটাও সহজতর হয়।

৩. অতিরিক্ত রাত জাগা পরিহার করো:

পরীক্ষার সময় অনেকেরই রাত জেগে পড়ার অভ্যাস রয়েছে। কিন্তু এটা একদমই করা উচিত নয়। মস্তিষ্কে স্মৃতি তৈরীর কাজটি ঘুমের মধ্যে হয়। পরীক্ষার আগের রাতের ঘুম তাই অত্যন্ত জরুরী। লরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত রাত জাগা মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন করে। নর্থ টেক্সাসের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত রাত জাগা চোখের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই পরীক্ষার সময় রাত জাগা পরিহার করুন। তার চাইতে রাতে আগে ঘুমিয়ে সকালে উঠে পড়ার অভ্যাস করতে পারেন।

৪. কঠিন পড়া গুলো ঘুমানোর আগে পড়ার চেষ্টা করো:

বিশেষজ্ঞদের মতে, অপেক্ষাকৃত কঠিন এবং বর্ণনামূলক পড়া ঘুমানোর আগে পড়া উচিত। এতে করে পড়াটি মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ঘুম থেকে উঠার পর পড়াটি মনে করা সহজতর হয়।

৫. পরীক্ষার আগের রাতের জন্য পড়া জমিয়ে রাখবেনা:

সকল পড়া পরীক্ষার আগের রাতের জন্য জমিয়ে না রেখে প্রতিদিন অল্প অল্প পড়ুন। পরীক্ষার আগের রাতে সকল পড়া একসাথে পড়তে গেলে মানসিক চাপ বাড়বে যা পরীক্ষায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পরীক্ষার আগের রাতের প্রস্ততি হিসেবে নতুন কিছু না পড়ে আগে যা পড়া হয়েছে তাই রিভাইস করুন।

৬. পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাও:

খাবারের সাথে মস্তিষ্কের ক্রিয়াক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে পরীক্ষার সময় চর্বিহীন এবং আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত। কারন এসব খাবার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

তবে, এখনো ভেবে দেখো, তোমার পরিস্থিতি অনেক অনুকূলে। তুমি একটু হলেও ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিয়েছ এবং কয়েকটাতে পরীক্ষা দিয়েছ। তার মানে, তুমি জানো প্রশ্নগুলো কেমন হয়। পরীক্ষা কেমন হয়। পরেরবার যারা ফ্রেশ বের হবে, তাদের চাইতে তুমি বেশি সময় পাচ্ছ। ওরা যা এখন নতুন করে শিখছে, তুমি তো সেগুলো আগেই পড়েছ। ভর্তি পরীক্ষার আগে হালকা রিভাইজও দিয়েছ।

পরিশেষে, মনে রাখবে, জীবনে বিজয়ী হতে চাইলে ঝুঁকি তো নেয়াই যায়, তাই না? তাই হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে চলো আলোচনা করে দেখি এই হতাশার কোনো কুল-কিনারা করতে পারা যায় কি না। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় নিশ্চিতভাবেই সফল হবে যদি সঠিকভাবে প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাস বজায় রাখো। তোমার জন্য রইলো শুভকামনা

সচরাচর জিজ্ঞাসা

Get it on Google PlayDownload on the app store

© 2024 Chorcha. All rights reserved.