আমরা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এডমিশনে অনেকেই স্বপ্ন দেখি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে পড়ার। সেই হিসেবে রুয়েট ভর্তি পরীক্ষা ইঞ্জনিয়ার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যত্নশীল এবং ধারাবাহিক ভাবে প্রিপারেশন নিলে রুয়েট ভর্তি পরিক্ষায় একটা ভাল ফলাফল করা সম্ভব।
রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রকৌশল, পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল এবং স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদসমূহের বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আসো জেনে নেই রুয়েট ভর্তি প্রস্তুতি ও বিজ্ঞপ্তির বিস্তারিত।
|
|
গ্রুপ | বিভাগসমূহ | ভর্তি পরীক্ষার তারিখ | ভর্তি ফি |
---|---|---|---|
ক (KA) | ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (URP) বিভাগ | ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (প্রাথমিক) ও ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (লিখিত) | ১২৫০/- টাকা |
খ (KHA) | ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, URP বিভাগ এবং আর্কিটেকচার ও পরিকল্পনা বিভাগ | ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (প্রাথমিক) ও ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (লিখিত) | ১৪৫০/- টাকা |
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ভর্তির প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠিন এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ, যা উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রার্থীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দেশের সকল শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়।
1. প্রাথমিক বাছাই: এইচএসসি ফলাফল অনুসারে প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন করা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের পরে, নির্দিষ্ট সংখ্যক যোগ্য প্রার্থীকে একটি লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়।
2. লিখিত পরীক্ষা: সাধারণত প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভর্তির আবেদন শুরু হয় এবং অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
রুয়েট-এর ভর্তি পরীক্ষা এইচএসসি ২০২৪ সালের পাঠ্যসূচির উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হবে। ক গ্রুপের জন্য ৩৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা এবং খ গ্রুপের জন্য ৩৫০ নম্বরের লিখিত ও ১০০ নম্বরের অঙ্কন পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এমসিকিউ পরীক্ষা:
পদার্থবিজ্ঞান: ৩০
রসায়ন: ৩০
গণিত: ৩০
ইংরেজি: ১০
লিখিত পরীক্ষা:
বিষয় | প্রশ্ন সংখ্যা | মোট নম্বর |
---|---|---|
গণিত | ১০ | ১০০ |
পদার্থবিজ্ঞান | ১০ | ১০০ |
রসায়ন | ১০ | ১০০ |
ইংরেজি | ৫ | ৫০ |
অঙ্কন (B. Arch) (শুধুমাত্র খ গ্রুপের জন্য) | ৪ | ১০০ |
EEE Academic Building, RUET
ছবি সূত্র: wiki media
রুয়েট-এ চারটি অনুষদের অধীনে চৌদ্দটি বিভাগ রয়েছে। প্রতিটি বিভাগের আসন সংখ্যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং: ১৮০
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা: ৬০
আর্কিটেকচার: ৩০
বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট: ৩০
কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং: ১৮০
ইলেকট্রনিকস ও টেলিকমিউনিকেশন: ৬০
ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং: ৬০
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং: ১৮০
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং: ৬০
গ্লাস ও সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং: ৬০
মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং: ৬০
কেমিক্যাল ও ফুড প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং: ৩০
মেটেরিয়াল সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং: ৬০
রুয়েট বিভিন্ন প্রকৌশল এবং প্রযুক্তিগত বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম প্রদান করে। প্রধান একাডেমিক ডিপার্টমেন্ট হলো:
1. সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ: কাঠামোগত প্রকৌশল, পরিবহন প্রকৌশল, পানিসম্পদ প্রকৌশল, ভূমিকম্প প্রকৌশল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করে। এখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সকল শাখায় শিক্ষাদান এবং গবেষণা পরিচালিত হয়।
2. ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ: বিদ্যুৎ উৎপাদন, বৈদ্যুতিক সার্কিট, মাইক্রোপ্রসেসর, যোগাযোগ প্রকৌশল ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক্সের বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি শিখে এবং উদ্ভাবন করে।
3. মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ: যান্ত্রিক নকশা, তাপবিদ্যা, প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং রোবোটিক্স ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাদান করে। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা যান্ত্রিক প্রকৌশলের বিভিন্ন শাখায় বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠে।
4. কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ: প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে শিক্ষাদান করে। এই বিভাগটি দেশের অন্যতম প্রধান কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগগুলির একটি।
5. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ: টেক্সটাইল টেকনোলজি, ফ্যাব্রিক প্রোডাকশন, গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং, এবং টেক্সটাইল ডিজাইন বিষয়ে শিক্ষাদান করে। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করতে সক্ষম হয়।
ECE Academic Building, RUET
ছবি সুত্র: রুয়েট ওয়েবসাইট
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ভর্তি প্রক্রিয়া কঠোর ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হলেও এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করে। উচ্চ মানের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম এবং এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ তৈরি করে।
অনুষদ | বিভাগসমূহ |
১. পুরকৌশল অনুষদ |
|
২. যন্ত্রকৌশল অনুষদ |
|
৩ তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদ |
|
৪. অ্যাপ্লাইড সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ |
|
Architecture Building, RUET
ছবি সুত্র: Dept. of Architecture, RUET
এই অংশে আমরা আলোচনা করব কিভাবে রুয়েটে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হয়। প্রার্থীরা একটি অনলাইন ভর্তি ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে পারেন যদি তারা আমাদের নীচের নির্দেশাবলী অনুসরণ করেন।
প্রথমে আবেদনকারীদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট- ruet.ac.bd-এ যেতে হবে।
ওয়েবসাইটে আপনি একটি অনলাইন ভর্তি ফর্ম দেখতে পারেন।
তারপর আপনাকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহ পূরণ করতে হবে।
ফর্মটি পূরণ করার সময় তাদের একটি সাম্প্রতিক ক্যাপচার করা রঙিন ছবি আপলোড করতে হবে। স্টুডিও কোয়ালিটি, হাইট-575 থেকে 625 পিক্সেল, প্রস্থ-415 থেকে 475 পিক্সেল, সাইজ-100 KB-এর কম।
আপনি যখন আবেদন সম্পূর্ণ করবেন তখন আপনাকে অনলাইন ব্যাঙ্কিং পরিষেবার মাধ্যমে আপনার আবেদনের ফি দিতে হবে। আপনি রকেটের মাধ্যমে ভর্তি ফি পাঠাতে পারেন। এখানে আমরা সমস্ত নির্দেশনা দেব যার দ্বারা আপনি ফি পাঠাতে পারেন। প্রথমে আপনাকে আপনার ফোনে রকেট অ্যাপস খুলতে হবে তবে আপনার যদি বোতাম ফোন থাকে তবে নীচের নিয়মগুলি অনুসরণ করুন।
প্রথমে ডায়াল করুন *322#
তারপর বিল পরিশোধ বিকল্প নির্বাচন করুন।
এখন সেলফ অপশন সিলেক্ট করতে 1 টিপুন অথবা অন্য অপশনের জন্য 2 টিপুন
মোবাইল নম্বর টাইপ করুন
বিলার আইডির পরিবর্তে 2555 লিখুন
এখন ওয়েবসাইট থেকে বিল নম্বর
ভর্তি ফি পরিমাণ লিখুন
এবার আপনার পিন নম্বর দিন
অবশেষে আপনি নিশ্চিতকরণের একটি এসএমএস পাবেন।
প্রবেশপত্র এবং আসন পরিকল্পনা উভয়ই পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রুয়েট ভর্তি পরীক্ষা রুয়েট ক্যাম্পাসে হয়ে থাকে। পরীক্ষার শুরুতেই সীট প্ল্যান দেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষার দিনে অ্যাডমিট কার্ড অবশ্যই নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক। পরীক্ষা শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট সময় আগেই হলে প্রবেশ করতে হবে।
ফলাফল প্রকাশের তারিখে, পরীক্ষার্থীরা প্রাথমিক ফলাফল এবং চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য রুয়েট মেধা তালিকা এবং অপেক্ষা তালিকা দেখতে পারে। রুয়েট ভর্তির ফলাফল পিডিএফ বা পৃথক লিঙ্ক প্তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে। সবার আগে গ্রুপের ফলাফল পিডিএফ পেতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে এবং তারপর ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড লিখতে হবে এবং ফলাফল দেখতে হবে।
যেকোনো ভর্তি পরিক্ষায় ভাল করার জন্য প্রয়োজন, সে পরীক্ষার বিষয় গুলোর ওপরে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। এর জন্য প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়কে আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিয়ে একাডেমিক এবং এডমিশনে পড়াশোনা করতে হয়। পদার্থ, রসায়ন, গনিত এর উপরে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য রুয়েট প্রশ্নব্যাংক থেকে যথেষ্ট পরিমান প্রাক্টিস করতে হবে।রেগুলার মডেল টেস্ট দিতে হবে এবং নিজের প্রগ্রেস রিপোর্ট ট্রাক করতে হবে। বেসিক ক্লিয়ার রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।শেষ মুহূর্তে এসে, পূর্বের পড়া বারবার রিভিশন দিতে হবে। বেশি বেশি পরীক্ষা দিয়ে টপিক গুলোকে আয়ত্তে আনতে হবে। মাথা ঠাণ্ডা রেখে শেষ সময়ে রিভিশন ভিত্তিক পড়াশোনা নিজের কনফিডেন্স বাড়াবে যা পরিক্ষাতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে আশা করি।
বিশেষ সতর্কতা: একটা কথা মনে রেখো সবাই। স্বপ্ন কখনোই কিনতে পাওয়া যায় না। ১০০ টাকার একটা সাজেশন তোমার কাছে অনেক ভালো লাগবে, অস্থির লাগবে। কিন্তু সেটা তোমার স্বপ্ন কিনে দিবে না। মূল কাজ তোমারই!! সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই উচিত ভর্তি পরীক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। এজন্য বিগত বছরের এডমিশন প্রশ্নব্যাংক এর উপর সর্বোচ্চ প্র্যাক্টিস থাকা জরুরি।এছাড়াও বুয়েট প্রশ্নব্যাংক, কুয়েট প্রশ্নব্যাংক, চুয়েট প্রশ্নব্যাংক দেখে রাখলে অনেক সময় উপকারে আসে যা পরবর্তী পরিক্ষাতেও কাজে লাগে। এছাড়াও আইউটি প্রশ্নব্যাংক, বুটেক্স প্রশ্নব্যাংক, এমআইএসটি প্রশ্নব্যাংক দেখলেও অনেক সময় কাজে লাগে।
আরেকটা জরুরি কথা, রুয়েটের জন্য প্রস্তুতি অন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতিতেও কাজে লাগে। তোমাদের জন্য শুভকামনা।