আজকাল কিন্তু একটা পোষ্ট অনেক জায়গায় ই দেখা যায়। যে, আপনার মেসেঞ্জার হ্যাক করা হচ্ছে, সব দেখে ফেলবে ,কাকে কি মেসেজ দিচ্ছেন সব, দেখে দেখে ধরবে, খেলা হবে… আসলেই কি তাই? আসলেই কি তা সম্ভব?
বর্তমান যুগে প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারতার সাথে সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষণে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, তাদের অনলাইন কার্যক্রমের উপর নজরদারি করা হচ্ছে এবং সেই চিন্তায় তারা আতঙ্কিত। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই এমন?
বিভ্রান্তিকর কিন্তু অনেক, তাইনা? তবে শোনো, বলছি.
নজরদারি সম্পর্কে যে ভয় ও আশঙ্কা অনেকের মধ্যে বাসা বেঁধেছে, তার পেছনে প্রচুর ভুল ধারণা ও গুজব আছে। এই ব্লগটি সেই ভুল ধারণাগুলোর ভেতরে আলো ফেলে সত্যিটা তুলে ধরবে। আমি এখানে দুইটি প্রধান যুক্তি তুলে ধরব কেন ব্যাপক নজরদারি সম্ভব নয় এবং তারপর আলোচনা করব কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হতে পারে।
না, সেখানে কোনো ব্যাপক নজরদারি চলছে না। কারণটা হলো:
1. এনক্রিপশন: তোমার মেসেঞ্জার ডেটা এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড। এনক্রিপশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বার্তাটি এমনভাবে কোড করা হয় যাতে শুধুমাত্র প্রেরক ও প্রাপক সেটি পড়তে পারেন। এনক্রিপশন হল তোমার বন্ধুর কাছে একটি লক করা ট্রেজার চেস্ট পাঠানোর মত, যেখানে শুধুমাত্র তুমি এবং তোমার বন্ধুর কাছে চাবি আছে। অন্য কেউ এটি খুলতে পারে না - এমনকি ফেসবুকও নয়। আমরা যখন মেসেঞ্জারে কোনো বার্তা পাঠাই, সেই বার্তাটি এনক্রিপ্টেড থাকে। তার উপরে, তুমি একটি VPN ব্যবহার করছো, যা এটিকে আরও জটিল করে তোলে।
2. ডেটা ভলিউম: বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি (৫০ মিলিয়ন) এরও বেশি। এত বিশাল পরিমাণ ডাটা প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। এই সকল ডাটা সংগ্রহ করা, সংরক্ষণ করা, বিশ্লেষণ করা এবং পূর্ববর্তী ডাটার সাথে মিলিয়ে পর্যবেক্ষণ করা একটি অসাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ। এর জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ কম্পিউটিং শক্তি এবং টাকা। যদি তুমি মনে করো যে এটি সম্ভব, তাহলে তুমি সেই দলটিকে অতিরিক্ত কৃতিত্ব দিচ্ছো যারা সঠিকভাবে ট্রেন টিকিটিং প্ল্যাটফর্মও তৈরি করতে পারেনি বা তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে হ্যাকিং থেকে বাঁচাতে পারেনি এবং প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার হারানোর ঝুঁকিতে ফেলেছিল। (BTW, কিছুদিন আগেই পুলিশ সহ আরো অনেক গুলো ওয়েবসাইট একাধারে হ্যাক হয়েছে)
এখন, এমন পরিস্থিতি রয়েছে যেখানে সরকার আপনার তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে:
1. অনুরোধের তথ্য: সরকার Facebook থেকে আপনার ডেটার জন্য অনুরোধ করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে কারণ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে তোমার বিরুদ্ধে একটি আইনি ওয়ারেন্ট জমা দিতে হবে, যা ফেসবুকের দ্বারা পর্যালোচনা করা হবে। তারপরেও, Facebook তাদের শুধুমাত্র মেটাডেটা দিতে পারে (টাইমস্ট্যাম্প, প্রেরক এবং প্রাপকের তথ্য, মেসেজের আকার, ইত্যাদি) কিন্তু মেসেজ দিতে পারবে না। তদুপরি, সরকার বছ
রের পর বছর ধরে অনুরোধের পরেও ফেসবুক অফিস খুলতে নারাজ। তারা বাংলাদেশের মতো একটি অলাভজনক, কম সিপিসি (প্রতি-ক্লিক-প্রতি-মূল্য) বাজার সম্পর্কে চিন্তা করতেও পারে না।
2. স্পাইওয়্যার: তুমি পেগাসাস এর টার্গেট হতে পারো। জানো? কুখ্যাত ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার কেনার জন্য অভিযুক্ত ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি (সূত্র: ডেইলি স্টার)। স্পাইওয়্যারটি একটি টেক্সট মেসেজ, ইমেজ বা যেকোনো কিছুর মাধ্যমে তোমার ফোনে অটো ইন্সটল করতে পারে। কোন ক্লিকের প্রয়োজন নেই। তারপরে এটি তোমার ডেটা সংগ্রহ করতে পারে এবং তোমার মাইক্রোফোন বা ক্যামেরাটি চালু করতে পারে, তুমি এটি সম্পর্কে কখনও জানতেও পারবে না। এটা সত্যি দুঃস্বপ্ন। মজার বিষয় জানো ? এটির প্রতি ডিভাইস ভিত্তিতে ২৫০০০ থেকে ৫০০০০ ডলার পর্যন্ত খরচ হয়। সুতরাং তুমি যদি একজন প্রধান বিরোধী ব্যক্তিত্ব বা অপরাধী না হও, তাহলে সম্ভবত তুমি এভাবে পর্যবেক্ষণের যোগ্যও নও।
কিন্তু তোমাদের ট্র্যাক করে তোমার আশে পাশের মানুষ, তোমার ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টের মানুষ। তারা তোমার ব্যাপারে টোকাই বলো, তাদের কাছে খবর দেয়।
নরমালি পুলিশ যখন ধরার অভিযানে যাচ্ছে তার আগে তারা ওই এলাকার নেতার সাথে দেখা করে , ইনফরমেশন নেয়, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা এক সাথে যায় বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায়।
ওটা আজীবন পারতো। কিন্তু করবে না। তাহলে মামলা খাবে, প্রচুর ঝুঁকি। আর তুমি নিজেই মেটা কে ওই এক্সেস দিয়েছো, app ইন্সটল এর সময়। তাই ওই পোস্ট বছর বছর হাজারবার শেয়ার করলে ভিন্ন কিছুই হবেনা। তাই এর থেকে ভালো সকাল বিকাল ৫০০ পোজ এ ১০০০০+ ছবি পোস্ট না করলেই হয়। (আমার দেখামতে একজন ই করে ওটা)। কমেন্ট এ বলো তো কে ওটা? স্ক্রীণশট ও দিতে পারো।
অনেকে ভাবো তুমি টাইমলাইনে পোস্ট করলেই নাকি ওরা আর তোমার ডাটা ইউজ করবে না। ব্যাপারটা এমন না। মেটাতে একাউন্ট ওপেন করতে গেলেই তারা যেসব ব্যাপারে Agree করতে বলে, আর আমরা প্রাইভেসি পলিসি চেক না করেই যে এগ্রি করি, সেটাতে শুরু থেকেই লেখা আছে যে এডভার্টাইজমেন্ট আর রিসার্চ পারপাজে মেটা আমাদের যেকোনো ডাটা অ্যাক্সেস করতে পারে, থার্ড পার্টির কাছে বিক্রিও করতে পারে। এভাবেই মেটার বিজনেস মডেল দাঁড় করানো হইসে। তুমি যেটা করতে পারো সেটা হলো তোমার সেটিংস অপশনে গিয়ে Privacy Centre এ যেয়ে তোমার ডাটা শেয়ারের ব্যাপারগুলো কাস্টোমাইজ করতে পারো, মিনিমাইজ করতে পারো। অপশনে গিয়ে রোমরা তোমাদের রাইট ক্লেইম করতে পারো,দেখতে পারো তোমার কোন কোন ডাটা মেটা ইউজ করে, ডাটা শেয়ার মিনিমাইজও করতে পারো।
ফেসবুক পোস্টে লিখে তোমার কোনো লাভ নাই।
সর্বোপরি, এই গভীর-উপস্থিত ভয় তোমার মধ্যে প্রোগ্রাম করা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে আপনার মনকে চিন্তামুক্ত জগিংয়ের জন্য যেতে না দেওয়ার কারণে। জন্ম-পড়ালেখা-চাকরি-বিয়ে-মৃত্যু এই দুষ্টচক্রের মধ্যে সবাইকে আটকে ফেলার কারণে।
কিন্তু এখন তুমি ভাল ভাবেই জানো, কেন তোমার লেখা একটি মেসেজ ই হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যত দেশ গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা।
একবারের জন্য, একটু স্বাধীনভাবে কথা বলতে দিন। একবারের জন্য, আপনার আঙ্গুলগুলিকে থামিয়ে না দিয়ে টাইপ করতে দিন। একবারের জন্য, কাপুরুষ হবেন না।
সবার জন্য শুভকামনা। চর্চা করো নিজের গতিতে