ঢাবি ক ইউনিট সাবজেক্ট রিভিউঃ লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং

Author
20/04/2024Chorcha

আসসালামু আলাইকুম বাচ্চাকাচ্চারা, কেমন আছো? ঢাবির ক ইউনিটে যারা লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং পাবে তাদেরকে সবুজের নির্মল ক্যাম্পাসে স্বাগতম....

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যকে সংশ্লেষণ,উৎপাদন এবং পরিশুদ্ধ করণের সাথে জড়িত, যার মাধ্যমে এগুলোকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক দ্রব্য যেমনঃ

Footwear, Clothing, Gloves, Bags, Upholstery - including Automobiles and Sports goods ইত্যাদিতে রুপান্তরিত করা যায় ।উইকিপিডিয়া অনুসারে “Leather is a durable and flexible material created by tanning of animal rawhide and skin”।অর্থাৎ ‘Leather’ বলতে শুধু মাত্র চামড়া (skin) বললে ভুল হবে।

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই সাবজেক্ট টা নিয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকেতো একে ‘জুতার প্রকৌশল’ বলে দাবি করে! যাই হোক আসল কথায় আসা যাক,এর manufacturing process টি বিভিন্ন ধাপের মাধ্যমে cottage industries থেকে heavy industry তে ত্বরান্বিত হয়।

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি তে পড়ানো এই Leather Engineering সাবজেক্ট টি মূলত Raw leather কে Finished leather এ synthesis করার তিনটি পর্যায় সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে শিক্ষার্থীদেরকে। এই তিনটি পর্যায় গুলো হলঃ Preparatory stages, Tanning and Crusting ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইন্সটিটিউটে বি.এসসি. ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ১৫০ টি আসন রয়েছে..

যেখানে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ৫০ টি, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ৫০ টি এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং এ ৫০ টি আসন বরাদ্দ।

কুয়েটেও লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মাত্র ৬০টি আসন রয়েছে। অর্থাৎ দেশের মাত্র ২১০ জন শিক্ষার্থী প্রতি বছর এ সাবজেক্টে অধ্যয়নের সুযোগ প্রাপ্ত হচ্ছে এবং গ্রাজুয়েশন করে বের হচ্ছে যা সেক্টরের চাহিদার তুলনায় খুবই কম। অর্থাৎ Subject related চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতার জায়গাটা অনেকাংশে কম।

বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত চামড়ার গুণগতমান উন্নত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারেও এর বেশ চাহিদা রয়েছে। Multinational industry গুলোর পাশাপাশি দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ছোট জুতা ও চামড়াজাত পণ্য তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও জুতার পাশাপাশি নানা ধরনের চামড়াজাত পণ্য তৈরি হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড যুদ্ধ চলমান থাকায় আর বাংলাদেশে লেবার কস্ট কম হওয়ায় নানান বড় বড় বিদেশি লেদার প্রোডাক্ট ও ফুটওয়্যার কোম্পানিগুলো এ দেশে তাদের ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করছে । যেমন Gucci, Tommy Hilfiger, Timberland, Picard, Adidas, Nike, Puma এর মতো বড় বড় ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি। বর্তমানে চীন,কোরিয়া সহ বিভিন্ন উন্নত দেশগুলো তাদের লেদার ও ফুটওয়্যার বিজনেসগুলোকে স্থানান্তর করছে বাংলাদেশে। তাছাড়া এখনই ৫০ টির মতো বিদেশি কোম্পানি আছে যারা চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করে এছাড়াও বিদেশি ফুটওয়্যার ইন্ড্রাস্ট্রি আছে ২০০ এরও অধিক।

কিন্তু এসকল industry এর জন্য যে পরিমান দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দরকার তা পূরণ করতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলশ্রুতিতে বিদেশ থেকে Leather Engineer বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। তাই বুঝতেই পারছো নিজেকে একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে নিতে পারলে তোমার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যত প্রতীক্ষা করছে। এজন্য তুমি দেশে থেকেই নিজের পছন্দ মতো বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে এবং ক্রমাগত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।

Subject সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা না থাকায় অনেকে না জেনেই ধরে নেয় যে একজন Leather Engineering স্টুডেন্ট এর কাজ হয়তো শুধু ট্যানারিতে। কিন্তু এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। একজন লেদার ইঞ্জিনিয়ার যে সকল সেক্টরে job করতে পারে তা দেখে নিই চলো....

• As Leather Engineer

• As Chemical engineer

• In Footwear Industry

• In Leather Products Industry

• In Leather Products Development Industry

• In Polymer Industry

• In Dyeing Industry

• Waste Management Industry

• Renewable Energy

‌তুমি যদি অত‍্যধিক পরিশ্রমী এবং সংযমী হতে পারো তবেই লেদার সেক্টরে উন্নতি করতে পারবে। তোমাকে পরিশ্রম করে অর্জন করে নিতে হবে কোনো কিছুই আপনাআপনি হবে না। তোমার ইচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকতে হবে। Dedicated হতে হবে পড়ালেখা, সেক্টর এবং তোমার কাজের প্রতি আর এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে ৫-৬ বছরের মধ্যে ৬ ডিজিট পর্যন্ত স্যালারি পাওয়া কঠিন কিছু না।

‌শুধুমাত্র লেদার সেক্টরেই নয় বিসিএস, নির্বাচন কমিশন, এনএসআই, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, লেদার রিসার্স ইন্সটিটিউট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এলএসবিপিসি, অর্থ মন্ত্রণালয়াধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ইত্যাদি ক্ষেত্রে চাকরির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।তাছাড়াও শিক্ষকতারও বড় সুযোগ রয়েছে । কারণ বাংলাদেশে চামড়া শিল্পের উন্নতির সাথে সাথে লেদার ইঞ্জিনিয়ার গ্র্যাজুয়েটের ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ডিপার্টমেন্ট খোলা হবে তাই সেখানে শিক্ষকতার যথেষ্ট সুযোগ থাকবে।

এখন আসা যাক Leather Engineering বিভাগে যেসব subject গুলো পড়ানো হয় তার সম্পর্কে।অনেকেই সাবজেক্টের নাম শুনে ভাবতে পারে এই ডিপার্টমেন্টে শুধু চামড়া নিয়েই পড়ানো হয় কিন্তু তা একেবারেই ভুল। এই সাবজেক্টে একটি প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের প্রায় সব সাবজেক্ট পড়ানো হয়। এর পাশাপাশি লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এসব Core subject গুলোও পড়ানো হয়....

Biochemistry of proteins, Principles of Pre-tannage, Analytical chemistry of pre –Tanning materials, Biotechnology of Leather manufacture, Mechanics Leather Machines, Methods of leather manufacture, Post tanning operations, Analytical Chemistry of Post tanning & finishing agents, Analytical Chemistry of leather, Footwear Engineering and Leather products Engineering.

এই বিষয় গুলো ছাড়াও চার বছরের কোর্সের এই ডিপার্টমেন্ট টিতে প্রথম ২ বছরে ডিপার্টমেন্টাল সাবজেক্ট এর পাশাপাশি-

Basic Electrical Engineering, Computer fundamental and programming , Computer aided graphics design, Basic Mechanical Engineering প্রভৃতি বিষয়গুলো সহ Inorganic and Organic Chemistry, Mathematics, Physics, Accounting, English and Economics সাবজেক্ট গুলোও পড়ানো হয়।

Leather Engineering এ B.Sc Engineering পাশ করার পর শিক্ষার্থীরা Leather Engineering এ M.Sc করার পাশাপাশি Chemical Engineering , Industrial Engineering, environmental science ইত্যাদি ডিপার্টমেন্ট এও M.Sc Engineering পড়তে পারে।

উচ্চতর গবেষণার ক্ষেত্রেও বিস্তর সুযোগ রয়েছে। আমাদের অনেক সিনিয়র আপু ভাইয়ারা এখন দেশের বাইরে উচ্চতর গবেষণায় অধ্যয়নত আছেন। সাধারণত Environmental science, Chemical engineering, Material science, Polymer science, Designing এগুলোতে তুমি সহজেই higher studies এর জন্য apply করতে পারবে। Leather নিয়ে higher study করতে চাইলে China, Canada, Australia, Germany and England এ স্কলারশিপের সুবিধা রয়েছে।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইন্সটিটিউটে লেদার, ফুটওয়্যার ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওয়ার্কশপের পাশাপাশি Solid waste management lab, Analytical Chemistry lab, CSE ও EEE lab সহ উচ্চতর গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব facilities ও রয়েছে।

বাংলাদেশে কেবল মাত্র ২ টি ইউনিভার্সিটি তে B.Sc in Leather Engineering ডিগ্রী প্রদান করা হয়ে থাকে । Khulna University Of Engineering & Technology (KUET) এ (60 seats) এবং Instute of Leather Engineering & Technology (University of Dhaka) তে (লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং=40 seats, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং=40 seats, লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং=40 seats) ।

কুয়েটে Leather Engineering ডিপার্টমেন্টে একইসাথে Leather Manufacturing Engineering, Leather products Engineering এবং Footwear Engineering বিষয় গুলো পড়ানো হয়। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে Leather Engineering & Technology অনুষদে ঐ তিনটি সাবজেক্ট এ আলাদা আলাদা তিনটি department আছে ।

আমাদের দেশে ঢাকার হাজারীবাগ ছাড়াও চট্রগ্রাম এ ও leather and leather goods এর বর্তমান চাহিদার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে Leather Industry । কিন্তু এসকল industry এর জন্য যে পরিমান দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দরকার তা fulfill করতে পারেনি বাংলাদেশ, ফলশ্রুতিতে বিদেশ থেকে leather engineer বাংলাদেশে আনা হচ্ছে । বাংলাদেশ সরকার এই চাহিদা বুঝতে পেরে 2010 সালে কুয়েটে ৬০ আসন বিশিষ্ট Leather Engineering department খোলার অনুমোদন দেয় ।

চামড়া ও চামড়া জাত দ্রব্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের Leather Industry চতুর্থ অবস্থানে (বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের মধ্যে )। একটা সময় ছিল যখন মানুষ tannery এর নাম শুনলে নাক শিটকে নিতো, কিন্তু সাবজেক্ট টার সাথে বিভিন্ন কেমিক্যাল term এর পাশাপাশি bio-chemical এবং bio-technological term এর সংমিশ্রণের কারণে Leather Engineering বর্তমান বহির্বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

বিঃদ্রঃ এসব তথ্য ঢাবির বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া। তাই নিশ্চিন্তে পড়তে পারো।-

সচরাচর জিজ্ঞাসা

Get it on Google PlayDownload on the app store

© 2024 Chorcha. All rights reserved.