জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: ঐতিহ্যের ধারক ও শিক্ষার আলোকবর্তিকা

Author
26/11/2024Syed Taisur Rahman Fayaz || Chorcha

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সম্মানিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। এটি শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি—ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পুরান ঢাকায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রজন্মের পর প্রজন্ম জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছে। ১৮৫৮ সালে সুধারাম কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি দেশের মুক্তিযুদ্ধ, সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এই নিবন্ধে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস, অবস্থান, ক্যাম্পাস, অনুষদ ও বিভাগ, আবাসিক ও অন্যান্য সুবিধা, নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিস্তারিত আলোচনা করব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের গভীরে গেলে আমরা দেখতে পাই এর শেকড় ১৮৫৮ সালে, যখন এটি সুধারাম কলেজ নামে পরিচিত ছিল। এর নাম পরে ১৮৭৫ সালে জগন্নাথ কলেজ করা হয় স্থানীয় জমিদার কিশোরীলাল রায়ের পিতা জগন্নাথ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে।

প্রয়াত জগন্নাথ রায় চৌধুরী ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। পড়াশোনার সুখ্যাতি ও প্রসারে অনুপ্রাণিত হয়ে জগন্নাথ রায় চৌধুরীর ছেলে কিশোরী লাল রায় চৌধুরী ১৮৮৪ সালে এটিকে কলেজে উন্নীত করেন। তখন এর নাম বদলে করা হয় ঢাকা জগন্নাথ কলেজ। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৭ সালে শিক্ষা বিভাগের নির্দেশে স্কুল ও কলেজ শাখা আলাদা হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কলেজটিতে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। তখন এর নাম ছিল ‘জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ’। এর ২৮ বছর পর ১৯৪৯ সালে এই কলেজে আবার স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে জগন্নাথ কলেজ সরকারি করা হয়। ১৯৭৫ সালে এতে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকারি জগন্নাথ কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।

এরপর ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর এই কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫ অনুযায়ী ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের আওতায় ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট আছে। শিক্ষার্থী ১৩ হাজারের বেশি।

উন্নয়নের ধারা

  • স্কুল থেকে কলেজে রূপান্তর:
    সুধারাম কলেজ মূলত একটি স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এটি উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা প্রদানে সক্ষম হয়।

  • বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর:
    ২০০৫ সালে, সরকারের একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে, এটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

  • মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা:
    জগন্নাথ কলেজ মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কলেজের অনেক শিক্ষার্থী শহীদ হন, যা এই প্রতিষ্ঠানের গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ।

ক্যাম্পাসের ভৌগোলিক বিবরণ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস পুরান ঢাকার সদরঘাটের নিকটে অবস্থিত। ঢাকা শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো যেমন বুড়িগঙ্গা নদী, আহসান মঞ্জিল এবং শাঁখারিবাজারের কাছাকাছি এই ক্যাম্পাসটি অবস্থিত। ক্যাম্পাসের একদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর মনোরম দৃশ্য এবং অন্যদিকে পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য এক ধরণের আবেগময় অনুপ্রেরণা দেয়।

ক্যাম্পাসের মনোমুগ্ধকর স্থানসমূহ

১. বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক এবং একাডেমিক কার্যক্রমের একটি প্রাণকেন্দ্র।

  • ব্যবহার:
    এটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, উৎসব এবং জাতীয় দিবস উদযাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • সৌন্দর্য:
    মুক্তমঞ্চটি সবুজ গাছপালা পরিবেষ্টিত, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রশান্তিময় পরিবেশ তৈরি করে।

২. গ্রন্থাগার ভবন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের সন্ধান দেওয়ার একটি প্রধান কেন্দ্র।

  • সৌন্দর্য এবং ব্যবহার:

    • ভবনটি আর্কিটেকচারাল নকশায় তৈরি এবং বেশ প্রশস্ত।

    • শিক্ষার্থীরা এখানে এসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারে।

৩. কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ

বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি শুধু শারীরিক ক্রীড়া চর্চার জন্যই নয়, এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

  • পরিবেশ:
    সবুজ ঘাসে মোড়া এই মাঠটি ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণ।মাঠটি ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন এবং অন্যান্য খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত হয়।

৪. বুড়িগঙ্গা নদীর তীর

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে খুব কাছেই বুড়িগঙ্গা নদী। এই নদীর তীরে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের ব্যস্ততা ভুলে প্রশান্তির মুহূর্ত কাটাতে পারে।

  • নদীর ধারে ঘুরে বেড়ানো:
    বিকেলের সময় নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা অনন্য।

  • সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:
    বুড়িগঙ্গার সান্নিধ্য পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশের সঙ্গে ক্যাম্পাসকে যুক্ত করেছে।

৫. আহসান মঞ্জিল এবং শাঁখারিবাজারের কাছাকাছি অবস্থান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।

  • আহসান মঞ্জিল:
    বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি বাংলাদেশে মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন।

  • শাঁখারিবাজার:
    এটি ঐতিহ্যবাহী শাঁখা ও হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝে এখানে ঘুরে তাদের ব্যস্ত সময়ের মধ্যে একটুখানি বিনোদন খুঁজে নেয়।

৬. ক্যাম্পাসের সবুজায়ন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সবুজায়নের জন্য প্রশংসিত।

  • পরিবেশ:

  • গাছপালা এবং ছোট বাগান ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

  • শিক্ষার্থীদের বসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বেঞ্চ এবং খোলা জায়গা রয়েছে।


বিশেষ আর্কিটেকচারাল কাঠামো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের স্থাপত্যশৈলী ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দনতার অন্যতম কারণ।

  • প্রশাসনিক ভবন:
    ক্যাম্পাসের মূল ভবনগুলোর একটি। এটি নান্দনিকভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

  • বিজ্ঞান ভবন:
    আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত, যা বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সরবরাহ করে।

  • চারুকলা অনুষদ:
    সৃজনশীল শিল্পচর্চার কেন্দ্রস্থল। ভবনের নকশায় সৃজনশীলতার ছাপ স্পষ্ট।


ক্যাম্পাসের জীবনধারা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের একে অপরের সঙ্গে মেলবন্ধনের একটি জায়গা।

  • আড্ডা:
    শিক্ষার্থীরা ক্লাসের ফাঁকে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ, খেলার মাঠ বা খোলা জায়গায় আড্ডা দেয়।

  • সাংস্কৃতিক পরিবেশ:
    এখানে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক এবং কনসার্টের আয়োজন করা হয়।

  • মুক্তচিন্তার চর্চা:
    ক্যাম্পাসের পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মুক্ত চিন্তা এবং মত প্রকাশের সুযোগ দেয়।

আবাসিক ও হল সুবিধা

বর্তমান অবস্থা

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব আবাসিক হলের সংখ্যা নেই।

  • শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই পুরান ঢাকার বিভিন্ন মেস বা ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।

পরিকল্পিত উদ্যোগ

  • বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে একটি আবাসিক ক্যাম্পাস স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।

  • এটি শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

১৯৮২ সাল থেকে শুরু হয় এলাকার প্রভাবশালীদের জগন্নাথ কলেজের হল দখলের পাঁয়তারা। ছাত্রদের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ বাধে বারবার। প্রথমে বেদখল হয়ে যায় কুমারটুলি ছাত্রাবাস। এরপর একের পর এক বেদখল হয় ৮৪ জিএল পার্থ লেন, কুমারটুলিতে (ওয়াইজঘাট ষ্টার সিনেমা হলের পিছনে) অবস্থিত হলগুলো। ১৯৯২ সালে ১৪টি ছাত্রাবাসের মাত্র ৩টি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাকিগুলো পুলিশ ও এলাকাবাসীরা দখল করে নেয়। ৩টি ছাত্রাবাসের দুটি (মাহমুদা স্মৃতি ভবন ও এরশাদ হল) বর্তমানে ভেঙ্গে মসজিদ ও কলা অনুষদ করা হয়েছে।

ছাত্রদের থাকার সুবিধার্থে ডিসেম্বর, ২০১১ইং তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট ১০টি হল বা ছাত্রাবাস রয়েছে; তন্মধ্যে ১টি ছাত্রীদের হল। উল্লেখ্য এই সবগুলো হলই বেদখল হয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই। হলগুলো হলো:

ছাত্রীদের হল

ছাত্রদের হল

  • বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল (ছাত্রীদের)

  • ড. হাবিবুর রহমান হল

  • বাণী ভবন হল

    ১নং ঈশ্বরচন্দ্র দাস লেনের ৩৫ ও ৩৬ প্যারিদাস রোড

  • আব্দুর রহমান হল

    স্থান: আরমানিটোলা বটতলার ৬, এসি রায় রোড

  • শহীদ আনোয়ার শফিক হল

    স্থান: আরমানিটোলা মাহুতটুলির ১, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোড

    রউফ মজুমদার হল

  • শহীদ আজমল হোসেন হল

    স্থান: পাটুয়াটুলীর ১৬ ও ১৭নং রমাকান্ত নন্দী লেন

  • বজলুর রহমান হল

    বংশালের ২৬, মালিটোলা

  • নজরুল ইসলাম খাঁন হল

    গোপীমোহন বসাক লেনের ৫/১,২,৩,৪ ও ৬নং টিপু সুলতান রোড

  • শহীদ শাহাবুদ্দিন হল।

    তাঁতীবাজার ৮২, ঝুলনবাড়ী লনে


আবাসিক হল আন্দোলন

১৯৮৫ সালে ছাত্রদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষে হলগুলো বেদখল হয়।

২০০৯ সালে ২৭ জানুয়ারি হলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। ২৯ দিন ব্যাপি চলে আন্দোলন। পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে "রক্ত নে, হল দে" শ্লোগানে মুখরিত হয় রাজপথ।

১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক মাসের মধ্যে ১২টি হল ও বেদখল হওয়া অন্যান্য সম্পত্তি উদ্ধারে সুপারিশ করতে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। ২০০৯ সালের মার্চে ৫টি হল (আনোয়ার শফিক হল, শাহাবুদ্দিন হল, আজমল হোসেন হল, তিব্বত হল ও হাবিবুর রহমান হল) বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ দেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি।

৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয়ে ৫টি হলের দীর্ঘমেয়াদি লিজের আবেদন করে। ৯ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়।

২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক আইনগত সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়কে হলগুলো লিজের পরিবর্তে অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে বললেও একাধিক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা ও আইনি জটিলতায় হল উদ্ধার কার্যক্রম থমকে থাকে।

২০১১ সালের ৩ অক্টোবর ড. হাবিবুর রহমান হল উদ্ধার হলেও তা আবাসন উপযোগী হয়নি।।

এরপর ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে বড় দুটি হল আন্দোলন হয়। জবির প্রশাসন কেরানিগঞ্জে হল তৈরির আশ্বাস দিলেও তা আর সফল হয়নি।

২০২২ সালে শুধুমাত্র নারী আবাসিকদের জন্য প্রথম আবাসিক হল খুলা হয়েছিলো।

নতুন ভবন

২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশের মাধ্যমে এটি পুর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে মোট সাতটি অনুষদের অধীনে ৩৮ টি বিভাগের ও ২টি ইন্সিটিউটের মাধ্যমে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন বর্তমানে মোট ২০৭ একর। সাড়ে সাত একরে বর্তমান শতবর্ষ পুরাতন ক্যাম্পাস ও ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় এর নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাস, যার আয়তন গেজেটভুক্ত ২০০ একর।

অনুষদ ও বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭টি অনুষদ এবং ৩৮টি বিভাগ রয়েছে। এই বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দেয়।


১. কলা অনুষদ

এই অনুষদটি বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণার কেন্দ্র।

  • বাংলা

  • ইংরেজি

  • ইতিহাস

  • ইসলামিক স্টাডিজ

  • দর্শন

২. সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ

সমাজের কাঠামো, পরিবর্তন এবং বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে।

  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান

  • সমাজবিজ্ঞান

  • নৃবিজ্ঞান

  • অর্থনীতি

  • গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা

৩. বিজ্ঞান অনুষদ

বিজ্ঞানের মৌলিক ও প্রয়োগিক দিক নিয়ে কাজ করে।

  • পদার্থবিজ্ঞান

  • রসায়ন

  • গণিত

  • পরিসংখ্যান

  • কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE)

৪. বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ

এই অনুষদে শিক্ষার্থীদের ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনার আধুনিক দক্ষতা প্রদান করা হয়।

  • হিসাববিজ্ঞান

  • ফিন্যান্স

  • মার্কেটিং

  • ম্যানেজমেন্ট

৫. আইন অনুষদ

  • আইন বিভাগ নৈতিকতা এবং আইনি ব্যবস্থার গভীর জ্ঞান প্রদান করে।

৬. জীববিজ্ঞান অনুষদ

প্রাণীজ এবং উদ্ভিজ্জ জীবনের গভীর অধ্যয়ন নিয়ে কাজ করে।

  • প্রাণিবিজ্ঞান

  • উদ্ভিদবিদ্যা

  • জিনতত্ত্ব ও জীবপ্রযুক্তি

৭. চারুকলা অনুষদ

চারুকলা অনুষদ সৃজনশীলতা ও নান্দনিকতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষা ও গবেষণা সুবিধা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা এবং একাডেমিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

  • গ্রন্থাগার:

    কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা। এখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক, জার্নাল এবং গবেষণাপত্রের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

  • ল্যাবরেটরি:

    বিজ্ঞান অনুষদের জন্য আধুনিক ল্যাব সুবিধা। গবেষণার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

  • ডিজিটাল ক্লাসরুম:

    অনলাইন পাঠ এবং মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ ক্লাসরুম প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার মান বাড়ানো হয়।

সাংস্কৃতিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া কার্যক্রম আয়োজন করে।

  • ক্লাব ও সংগঠন:

    • ডিবেট ক্লাব, থিয়েটার ক্লাব, ফটোগ্রাফি ক্লাব প্রভৃতি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বাড়ায়।

  • খেলাধুলা:

    • বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বড় খেলার মাঠ রয়েছে।

    • ক্রিকেট, ফুটবল এবং অ্যাথলেটিক্সে জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব দেখিয়েছে।

  • সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:

    • পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবস উদযাপন।

উল্লেখযোগ্য সংগঠন

  • সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট

  • বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

  • বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন

  • বাংলাদেশ ছাত্র মজলিশ

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (২০ জুন,২০০৬)

  • বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম (২০১৮)

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ - জবিচস (২০০৯)

  • উদীচী

  • বিএনসিসি

  • বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

  • বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা

  • বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব (১ অক্টোবর, ২০১৪)

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি ( ২৩ নভেম্বর ২০১৭)

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (জেএনইউডিএস)

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

  • বাঁধন

  • কনজ্যুমার ইউথ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ

  • প্রথম আলো বন্ধুসভা

  • ক্যারিয়ার ক্লাব

  • ফিল্ম ক্লাব


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ঐতিহ্যবাহী নাম। এর দীর্ঘ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং একাডেমিক উৎকর্ষতার জন্য এটি দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে ভবিষ্যতে এ বিশ্ববিদ্যালয় আরও উন্নত এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে আশা করা যায়।

আজকের মত এটুকুই। চর্চা করো নিজের গতিতে…

সচরাচর জিজ্ঞাসা

Get it on Google PlayDownload on the app store

© 2024 Chorcha. All rights reserved.