হাই হাই! কেমন আছো? আজকের জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় তোমাকে স্বাগত
শিক্ষা হচ্ছে একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি , তাই না? কিন্তু, শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে পরীক্ষায় পাশ মার্ক হিসেবে ৩৩% নির্ধারিত , যা অনেকের কাছেই রহস্যময় মনে হয়। কেন ৩৩% পাশ মার্ক হিসেবে ধরা হয়, এর পেছনের কারণ কী এবং এর প্রভাব কীভাবে শিক্ষার্থীদের উপর পড়ে—চলো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক।
বর্তমান বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে প্রতিষ্ঠিত। ব্রিটিশরা যখন এই অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে, তখন শিক্ষার্থীদেরকে মূল্যায়নের জন্য সহজ ও কার্যকর একটি পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল। সেই সময় শিক্ষাবিদরা পরীক্ষায় পাশ মার্ক হিসেবে ৩৩% নির্ধারণ করেন। এটি একটি সহজ এবং গণনাযোগ্য সংখ্যা হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে এই মানদণ্ড সহজবোধ্য ছিল। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ৩৩% পাশ মার্ক এখনো শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত রয়েছে, যা প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মূল মার্ক এর ১/৩ অংশ বা ৩৩% পাশ মার্ক নির্ধারণ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি ন্যূনতম দক্ষতার স্তর নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষায় এই মার্ক অর্জন করলে শিক্ষার্থীর মৌলিক ধারণা বা বিষয়বস্তুতে ন্যূনতম দক্ষতা আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এটি এমনভাবে নির্ধারণ করা যাতে শিক্ষার্থীরা অন্ততপক্ষে বিষয়বস্তু বুঝতে পারে এবং মৌলিকভাবে ধারণা নিতে সক্ষম হয়। পাশ মার্ক হিসেবে ৩৩% নির্ধারণ শিক্ষার্থীদের এক প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের গ্যারান্টি হিসেবে দেখা হয়।
৩৩% পাশ মার্ক নির্ধারণ করা একটি সহজ ও গণনাযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে জনপ্রিয়। এটি শিক্ষকদের কাছে সহজেই বোঝা যায় এবং দ্রুত ফলাফল নির্ধারণে সহায়ক। পরীক্ষার মানদণ্ড নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক মূল্যায়নের জন্য সহজ একটি মানদণ্ড হওয়া দরকার। এই মার্কিং সিস্টেমটি শিক্ষকদের জন্যও সহায়ক, কারণ এটি সহজেই শিক্ষার্থীর পাস বা ফেল অবস্থা নির্ধারণ করতে সক্ষম করে।
বাংলাদেশসহ অনেক দেশে পাশ এবং ফেলের মধ্যে একটি মানসিক ও সামাজিক পার্থক্য নির্ধারণের জন্য ৩৩% পাশ মার্ককে আদর্শ সীমা হিসেবে ধরা হয়। একটি গণতান্ত্রিক ও সামাজিক সমাজে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নূন্যতম মান অর্জনের প্রত্যাশা থাকে। খুব উচ্চ পাশ মার্ক নির্ধারণ করলে অনেক শিক্ষার্থী সেই মানদণ্ডে পৌঁছাতে না পারায় তাদের ফেল করার সম্ভাবনা বাড়ে, যা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি চাপের কারণ হতে পারে। তাই, ৩৩% মার্ক দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ব্যালান্স বা সহনশীল মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের উপর পরীক্ষা সংক্রান্ত চাপ কমানো এবং শিক্ষায় আগ্রহী করতে ৩৩% পাশ মার্ক একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। খুব বেশি পাশ মার্ক রাখলে শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনুভব করে, যা তাদের শিক্ষায় উৎসাহ কমিয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, নূন্যতম ৩৩% পেতে শিক্ষার্থীরা চাপহীন পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারে এবং শিক্ষার প্রতি তাদের ইতিবাচক মনোভাব বজায় থাকে। এটি শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ কমিয়ে দেয় এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
যদিও ৩৩% পাশ মার্ক অনেকের জন্য সুবিধাজনক, তবে এ নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। কিছু শিক্ষাবিদ মনে করেন যে, এটি শিক্ষার্থীর প্রকৃত জ্ঞান বা দক্ষতার সঠিক প্রতিফলন করে না। কম পাশ মার্ক শিক্ষার মানকে নষ্ট করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও, শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করতে পাশ মার্ক বাড়ানো প্রয়োজন বলে অনেকের মত।
একবিংশ শতাব্দীর পরিবর্তনশীল শিক্ষাব্যবস্থায় শুধুমাত্র পাশ মার্ক দিয়ে শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন যথেষ্ট নয়। শিক্ষার্থীদের মেধা, দক্ষতা, এবং সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার মানদণ্ড নির্ধারণ করা উচিত। বর্তমান যুগের চাহিদা অনুযায়ী একটি উদ্ভাবনী এবং বাস্তবমুখী
৩৩% পাশ মার্কের ধারাটি ঐতিহাসিক এবং সামাজিক বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম মান অর্জনের একটি সহজ মানদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তবে এই পাশ মার্ক শিক্ষার প্রকৃত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে, যা আজকের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য প্রযোজ্য। শিক্ষা মানকে উন্নত করতে শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন মানদণ্ড নির্ধারণ এবং শিক্ষার্থীদের মেধা ও দক্ষতার সঠিক মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী ও গুণগত শিক্ষার জন্য এই প্রথাগত মূল্যায়ন পদ্ধতিকে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতার সমন্বয় সাধন হয়।
তাই পরীক্ষায় শুধু পাশ এর চিন্তা না করে পরীক্ষায় নিজের সেরা টা দিয়ে চেষ্টা করো। আর চর্চা করো নিজের গতি্তে