১২ প্রবন্ধ- নিবন্ধ রচনা
আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি।
ভূমিকা
আধুনিক যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। এই প্রযুক্তির কল্যাণেই আগামী দিনের সভ্যতা সমৃদ্ধ হবে। আধুনিককালের মানবজীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। মানবজীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রযুক্তিই মানুষকে উন্নয়নের পথ দেখাচ্ছে। যদিও এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ করা যায়। তথাপি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বর্তমান মানব সমাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দুটি পৃথক বিষয়। বিজ্ঞান মানে মানুষের বিশেষ ধরনের জ্ঞান, যা তত্ত্ব ও তথ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করে বাস্তব সত্যকে ধারণ করে। আর প্রযুক্তি বলতে বোঝানো হয় বিজ্ঞানের সত্য ও সূত্রকে বৈজ্ঞানিক কায়দায় মানুষের জীবনে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলার যন্ত্রকে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সৃষ্ট মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ ব্যাবহারিক উপকরণাদিই প্রযুক্তি।
মানবসভ্যতায় প্রযুক্তি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে আধুনিক মানুষের জীবন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই মানবজীবনকে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করছে। দিন দিন বিজ্ঞানের উন্নতি হচ্ছে, নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে। আর প্রযুক্তির সংস্পর্শে মানুষের জীবনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক মানবজীবন প্রায় অচল। স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগ, বিনোদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়।
প্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতা
বিজ্ঞানীদের বিস্ময়কর আবিষ্কার প্রযুক্তি। প্রযুক্তির সংস্পর্শে পৃথিবীতে আধুনিক সভ্যতার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবী দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে কাজ সমাধান করতে পারে। প্রযুক্তির সহায়তায় মানুষ অল্প পরিশ্রম করে অধিক কাজ করতে পারে এবং আর্থনীতিক উন্নতিও হয় দ্রুত। তাই বিশ্ব এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। এক দেশে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি অন্য দেশে রপ্তানি করে আর্থিক উন্নতি করছে।
আধুনিক জীবনে প্রযুক্তি
একুশ শতকের মানুষের জীবন-জীবিকার সর্বক্ষেত্র প্রযুক্তি-নির্ভর। শহরে শহরে যে আকাশচুম্বী বহুতল দালান গড়ে উঠেছে; আমরা যে বাস, ট্যাক্সিতে যাতায়াত করছি তা প্রযুক্তিবিজ্ঞানের আশীর্বাদ। বাষ্প, বিদ্যুৎ ও পারমাণবিক শক্তিচালিত রেল ও স্টিমার পরিবহন ব্যবস্থায় যুগান্তর এনেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে; পাখা, হিটার, রেডিয়ো, টিভি, ফ্রিজ, ভিসিয়ার, ভিসিপি, লিফট, এয়ারকুলার, কম্পিউটার চলছে; অফিস-আদালতে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে, সংবাদপত্রের অফিসে যে ক্যালকুলেটর, টাইপরাইটার, ফটোকপিয়ার, ফ্যাক্স, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে তাও সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। শিল্পাঞ্চলে উৎপাদনের প্রধান চালিকাশক্তিই হচ্ছে প্রযুক্তি, গ্রামাঞ্চলে কুটিরশিল্পেও এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। কৃষিতে কর্ষণ, বীজ বপন, নিড়ানো, ফসল কাটা, ফসল তোলা, ঝাড়াইমাড়াই ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রযুক্তি।
জলসেচের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র। চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন বহুলাংশে প্রযুক্তি-নির্ভর। এক কথায় আধুনিক যুগের মূলভিত্তি ও সহায় হচ্ছে প্রযুক্তি। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র আধুনিককালে মানুষের জীবনে নতুন আয়ের সূচনা করেছে। শুধু কি তাই, বিনোদন থেকে শুরু করে যুগান্তকারী সব সাফল্যের পেছনেও রয়েছে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের প্রশংসনীয় ভূমিকা।
প্রযুক্তির উপকারিতা
নব নব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে আধুনিক বিশ্বে মানবজীবনের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ দেশ, জাতি এমনকি সমগ্র বিশ্ব উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছতে পেরেছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলেই মানুষের অভাব দূর হচ্ছে, উন্নত চিকিৎসার ফলে মানুষ রোগমুক্ত হচ্ছে। প্রযুক্তিই এখন মানবজীবনের সকল সমস্যা সফলভাবে সমাধান করছে। তাই বলা যায়, এ প্রযুক্তি আধুনিক জীবন উপহার দিয়েছে।
প্রযুক্তির অপকারিতা
প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষে বর্তমান বিশ্ব আজ ভয়াবহ সংকটে রয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকিতে বিশ্বশান্তি বিপন্ন করছে। বিশ্ব সংঘাতের মূলেও রয়েছে এই প্রযুক্তি। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের যুদ্ধ, অশান্তি এবং নানা প্রকার অশনি সংকেতের কথা বললেও প্রযুক্তি মানব কল্যাণে ব্যবহার করে আশাতীত ফল পাওয়া যায়।
উপসংহার
প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মানুষ সভ্য জীবনযাপন করছে। আর আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির অন্য কোনো বিকল্প নেই। তবে প্রযুক্তিকে সত্যিকারার্থে বিশ্বমানবের কল্যাণে লাগাতে হবে- এ আহ্বান সকলের কাছে।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই