১১ সংলাপ / খুদেগল্প
(ক) একটি পূর্ণিমা রাতের সৌন্দর্য প্রসঙ্গে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।
অথবা,
(খ) প্রদত্ত শিরোনাম অবলম্বনে একটি খুদেগল্প লেখো: অসময়ের বন্ধু প্রকৃত বন্ধু।
(ক)
উত্তর: একটি পূর্ণিমা রাতের সৌন্দর্য প্রসঙ্গে দুই বন্ধুর সংলাপ
কমল : কেমন আছো, অমল?
অমল : ভালো। তুমি কেমন আছো, কমল?
কমল : আমিও ভালো আছি। গত এক সপ্তাহ তোমার যে কোনো খোঁজ নেই?
অমল : আমার দাদাবাড়ি কৃষ্ণপুর গিয়েছিলাম।
কমল : ও তাই! গ্রামে নিশ্চয় অনেক মজা করেছো।
অমল : হ্যাঁ। তবে এবার অনেক বছর পর গ্রামে গেলাম। গ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে আমি অভিভূত।
কমল : গ্রামই হলো বাংলাদেশের প্রাণ। এই শহরের কোলাহল আমারও ভালো লাগে না। তা গ্রামে কোন জিনিসটি তোমাকে বেশি অভিভূত করেছে।
অমল : পূর্ণিমার জোছনা শোভিত রাত। কী বলবো তোমাকে, রাত যে এত সুন্দর হয়, তা আমি আগে কখনও উপলব্ধি করিনি।
কমল : আমার কাছেও পূর্ণিমা রাত দারুণ প্রিয়।
অমল : সেদিন ছিল রবিবার। গ্রামের চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোনদের সঙ্গে আমি রাতে বের হয়েছিলাম। রাতের আকাশে ছিল পূর্ণচন্দ্র। চারিদিকে সুনসান নীরবতা। গ্রামের সবকিছুই চাঁদের আলোয় দেখা যাচ্ছিল।
কমল: আমিও গ্রামে গেলে চাঁদের আলোয় নদীর পথ ধরে বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটতে বের হই। গ্রামকে ছবির মতো সুন্দর মনে হয়।
অমল : আমাদের গ্রাম থেকে নদী অনেক দূরে। তবে দাদাবাড়ির অনতিদূরেই রয়েছে সীতারাম বোসের দীঘি। সেই দীঘির স্বচ্ছ জলে চাঁদের আলো যেন ঠিকরে পড়ছিল। পাড়ের উঁচু গাছের প্রতিফলন তাতে দেখা যাচ্ছিল।
কমল : আমাদের কলসকাঠী গ্রামের ইছামতি নদীর তীরেও আমি এই রকম দৃশ্য দেখেছি।
অমল : আমরা চাচাতো ও ফুফাতো ভাইয়েরা প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত বাইরে ঘুরেছিলাম। দিনের গ্রাম রাতে যেন আরব্য রজনীর সুষমামণ্ডিত রাজ্য হিসেবে আমাদের চোখে ধরা দিল। দূরের গাছগুলো আর সবুজ রইল না। মনে হলো গাঢ় কালো রঙের পাতাসমৃদ্ধ গাছগুলো আমাদের হাতছানি
কমল : চাঁদের আলোয় পাতার সবুজ রং কালো বলে মনে হয়।
দিয়ে ডাকছে। : গাছের উঁচু মগডালে বসে ডাকছিল লক্ষ্মীপেঁচা। কেমন এক মায়া তাদের ডাকে। রাতের নীরবতা ভঙ্গ করে এক অমল
মোহনীয় সুরলহরী তৈরি করেছিল সেদিন। আমরা হাঁটছিলাম। হঠাৎ নিস্তব্ধতার বুকে চিরে উড়ে গেল কোনো বাদুড় জাতীয় পাখি। বুক দুরুদুরু করে উঠেছিল আমাদের।
কমল : এ এক ভয়মিশ্রিত বর্ণনাতীত সৌন্দর্য। কোনো কবির লেখনীতে তা বোধ হয় আজও ধরা পড়েনি।
অমল : দূরে বন থেকে মাঝে মাজে ভেসে আসছিল খ্যাঁকশিয়ালের ডাক। আমাদের সঙ্গী ছিল চাঁদ। আমরা হাঁটি। যেন চাঁদও আমাদের অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছে। আমরা যেই থামি। অমনি চাঁদও থমকে দাঁড়ায়। চাঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা যারপরনাই পুলকিত হই।
অমল : সত্যিই রাতে জোছনা শোভিত গ্রাম ছবির চেয়েও সুন্দর। : আকাশে হালকা মেঘও ছিল। মাঝে মধ্যে মেঘ আড়াল করে দেয় চাঁদকে। পৃথিবীর বুকে নেমে আসে সামান্য আঁধার। খানিক বিরতিতে আবার চাঁদ মামা উঁকি দেয়। চাঁদের এই লুকোচুরি খেলা শহরেটা তেমন চোখে পড়ে না। আমরা রাত ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সেদিন গ্রামের মেঠো পথে হেঁটে বেড়িয়েছিলাম। কিছুতেই বাড়ি ফিরতে মন চাইছিল না। বাড়ির সবাই দুশ্চিন্তা করছে ভেবে আমাদের ফিরতে হয়েছিল।
কমল : আমিও গ্রামে গেলে পূর্ণিমা রাতের সৌন্দর্য না দেখে আসি না।
অমল : ওই রাতের স্মৃতি আমার জীবনের অন্যতম একটি স্মরণীয় দিন। আমি কোনোদিন দিনটিকে ভুলব না, বন্ধু।
কমল : আচ্ছা বন্ধু আজ তা হলে আসি। পরে আবার দেখা হবে। ভালো থেকো। বিদায়।
অমল : তুমিও ভালো থাকো। বিদায়।
অথবা,
(খ) উত্তর:
অসময়ের বন্ধু প্রকৃত বন্ধু
আমি আর মতিন ছোটো থেকেই একসঙ্গে বড়ো হয়েছি। ঘুমের সময় ছাড়া বাকি সময়টুকু দুজনে প্রায় একসঙ্কোই থাকি। একই কলেজে পড়ি, একসঙ্গেই যাতায়াত করি। মতিন একটু চুপচাপ ধরনের। আমি আবার কথা না বলে থাকতে পারি না। বেশি কথা বলার কারণে প্রায়ই ও আমার ওপর বিরক্ত হয়। নানা কটুকথাও বলে। এগুলো শুনে আমার মন খারাপ হয়। কিন্তু সে মন খারাপ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আবার আমি ওর কাছে যাই। দুজনে সব ভুলে আবার আগের মতো থাকি। কেউ কেউ আমাদের মানিকজোড় বলে। মানিকজোড় কিনা জানি না কিন্তু দুজনেই দুজনের সঙ্গে থাকতে খুব পছন্দ করি। একবার আমার খুব শরীর খারাপ হলো। জ্বরের ঘোরে আমি উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকলাম। মাঝে মাঝেই ঘোরের মধ্যে মতিনের নাম বলতে থাকলাম। আমাদের বাড়ি থেকে মতিনের খোঁজও করা হলো, কিন্তু ওর দেখা পাওয়া গেল না। অনেকদিন শয্যাশায়ী ছিলাম, কিন্তু মতিন একদিনও আমাকে দেখতে এলো না। এগুলো ভেবে আমার খুব কষ্ট হলো। কিন্তু কাউকে কিছু বলতেও পারলাম না। একটু সুস্থ হতেই বাড়ির বাইরে বের হতে শুরু করলাম। তারও ক'দিন পরে কলেজে গিয়ে মতিনের সঙ্গে দেখা হলো। হাসিমুখ নিয়ে ও কথা বলার জন্য এগিয়ে এলো। কিন্তু আমি কোনো কথা বললাম না। পেছন থেকে অনেকবার ডেকেছিল আমাকে কিন্তু সাড়া দিইনি। সন্ধেবেলায় এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ চার-পাঁচটা ছেলে আমার পথ আগলে দাঁড়ায়। আমার কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও অন্য জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমিও প্রাণপণে বাধা দিই। কিন্তু অতজনের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। খানিক দূর থেকে মতিনের গলা শুনতে পেলাম। ও দৌড়ে আসছে এদিকে। ওকে দেখে ছেলেগুলো সতর্ক হয়ে গেল। একজন পকেট থেকে একটি ধারালো অস্ত্র বের করল। মতিন ওদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে লাগল। আমিও নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে লাগলাম। এক পর্যায়ে মতিনের হাতের খানিকটা অংশ কেটে রক্ত ঝরতে লাগল। ততক্ষণে দু-একজন এদিকে দৌড়ে আসতে শুরু করেছে। অবস্থা টের পেয়ে ছেলেগুলো পালিয়ে গেল। আমি মতিনকে নিয়ে দ্রুত একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে ওর ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বাঁধার ব্যবস্থা করলাম। তারপর একটা রিকশা নিয়ে দুজনে এসে আমাদের বাড়িতে নামলাম। সবকিছু শুনে বাড়ির সবাই মতিনকে বাহবা দিতে লাগল। কিন্তু আমি যেন কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। ওকে আমার সঙ্গে এতদিন দেখা না করার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। জানতে পারলাম, ওর নানা মারা গিয়েছিল। সেখানেই ছিল ও। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল। তারপর ভুল ভাঙল, ওকে জড়িয়ে ধরলাম আমি। উপলব্ধি হলো, সত্যিকারের বন্ধু কখনো বিপদে চুপ করে বসে থাকে না।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই
(ক)
জ্ঞানচর্চায় বিজ্ঞানের ভূমিকা দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপতৈরি কর।
অথবা,
(খ) প্রদত্ত উদ্দীপক অনুসরণে 'পানি-দূষণ' বিষয়ে একটি ক্ষুদে গল্প রচনা কর:-
লঞ্চ ভ্রমণের সময় বুড়িগঙ্গা নদীর পানির রং দেখে রাহাত বিস্মিত হয়।…………….
(ক) নিরাপদ সড়ক চাই বিষয়ে দুজনের মধ্যে একটি সংলাপ রচনা কর ।
অথবা,
(খ) "তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? উদ্দীপকটি অনুসরণে একটি খুদে গল্প রচনা কর।
(ক) একটি ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।
অথবা,
(খ) গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়ানো বিষয়ে একটি খুদেগল্প রচনা করো।
(ক) মেট্রোরেল ভ্রমণের আনন্দকে কেন্দ্র করে দুই বন্ধুর সংলাপ তৈরি কর।
অথবা, (খ) 'স্বপ্ন পূরণের আশা' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।