১১ সংলাপ / খুদেগল্প
(ক) 'ফেসবুকের সুফল ও কুফল' বিষয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা করো।
অথবা,
(খ) নিচের উদ্দীপক অনুসরণে একটি খুদেগল্প লেখো: পড়ন্ত বিকেলে ঢাকার ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে রাজু ভাবে, কালের প্রবহমান স্রোত জীবনকে আজ কতদূরে নিয়ে এসেছে। কিন্তু শৈশবের স্মৃতিগুলো আজও...
(ক) উত্তর:
উত্তর: 'ফেইসবুকের সুফল ও কুফল' বিষয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ
সনিয়া : কিরে তানজিনা, কেমন আছিস?
তানজিনা: ভালো, তুই কেমন আছো, দোস্ত?
সনিয়া: ভালো। ওহ তোকে কাল রাতে ফেসবুকে মেসেজ পাঠিয়েছিলাম। রিপ্লাই দিলি না যে।
তানজিনা: আমি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাই। রাতে ফেসবুকে ঢুকি না বললেই চলে। দুঃখিত দোস্ত, খেয়াল করিনি।
সনিয়া : খুবই ভালো অভ্যাস। আমি তো সারারাত ফেসবুকে স্কুল করতেই থাকি। গভীর রাতেও ঘুম আসতে চায় না।
তানজিনা: ফেসবুক আমাদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় কেড়ে নেয়। সম্পর্কের বন্ধনগুলো যেন কেমন শিথিল হয়ে পড়ছে ক্রমশ। চেনা-জানা সম্পর্কগুলোকে ছেড়ে কোন ভার্চুয়াল জগতে বুঁদ হয়ে আছে তরুণ প্রজন্ম।
সনিয়া : ঠিক বলেছিস। আমি অনেকবার ফেসবুক ব্যবহার পরিহার করতে চেয়েছি। পারিনি। তবে ফেসবুকের অনেক ইতিবাচক দিকও রয়েছে।
তানজিনা ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক দিকই মনে হয় বেশি ফেসবুকের। এটি মূল্যবান সময় কেড়ে নিচ্ছে, ঘুম কেড়ে নিচ্ছে, শিশু-কিশোরদের সাইবার ঝুঁকিতে ফেলছে। ফেসবুক সম্পর্ক তৈরি করে প্রতারণার খবর তো আজকাল হরহামেশাই পত্রিকার পাতা খুললে চোখে পড়ে।
সনিয়া : তোর কথাগুলো মিথ্যা নয়।
তানজিনা: ফেসবুকের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। বিশেষত ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রজীবন হচ্ছে ভবিষ্যৎ গঠনের মোক্ষম সময়। এ সময় পড়াশুনাই তার প্রধান কাজ। কিন্তু আমাদের দেশে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা বাদ দিয়ে ফেসবুকের জগতে ডুবে আছে। দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টাই তারা ফেসবুকে থাকতে চায়। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন।
সনিয়া : তোর কথার সত্যতা থাকলেও ফেসবুক কিন্তু শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারও করছে। ফেসবুক শিক্ষার্থীদের সামনে ই- লার্নিংয়ের এক বিশাল জগৎ খুলে দিয়েছে। শিক্ষামূলক নানা গ্রুপে দরকারি সব শিক্ষা উপকরণ আজ ফেসবুকে লগ-ইন করলেই পাওয়া যাচ্ছে।
তানজিনা: দেখ, বেড়ার অপর পাশের ঘাস সব সময় সবুজই মনে হয়। ফেসবুকের কল্যাণে বর্তমানে প্রশ্নপত্র ফাঁস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে প্রশ্ন। শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে ধূলিস্যাৎ করে দিচ্ছে।
সনিয়া : এটা সত্য কথা। ফেসবুক সহজলভ্য হওয়ার আগে এতটা মহামারির মতো প্রশ্ন ফাঁস হতো না।
তানজিনা: শুধু কি তাই! ফেসবুকের কারণে দেশের তরুণ প্রজন্ম মারাত্মক সাইবার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। হুমকির মুখে পড়ছে তাদের নিরাপত্তা। ফেসবুকে মেয়েরা প্রতিনিয়ত হ্যারেজমেন্টের শিকার হচ্ছে। অশ্লীল ছবি, ভিডিও, আদিরসাত্মক লেখা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভয়াবহ ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। ফেসবুকে প্রেমের নামে চলছে প্রতারণা।
সনিয়া : তোর কোনো কথাই ভিত্তিহীন নয়। দেখ এ জন্য তো আমরা ফেসবুককে দোষ দিতে পারি না। দোষ যত এর ব্যবহারকারীদের। মাথা ব্যথা বলে তো আর মাথা কেটে ফেললে সমাধান হয়ে গেল না। এ কারণেই ফেসবুক ব্যবহারে সকলকে সচেতন হতে হবে। ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের ফেসবুক ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে। অথবা অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে ফেসবুক ব্যবহার করতে দিতে হবে।
তানজিনা: এটা তো খুবই চমৎকার ও কার্যকর ধারণা।
সনিয়া : তুই দেখ, ফেসবুক আমাদের শিক্ষাজীবনে কত কাজে আসছে। সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ, ক্লাসের সময় জানা, শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ আজ ফেসবুকের গ্রুপেই আমরা করে থাকি।
তানজিনা: হ্যাঁ। ঠিক বলেছিস।
সনিয়া : তাছাড়া মুহূর্তের মধ্যেই আমরা বিশ্বের নানা প্রান্তের খবরাখবরও আজকাল ফেসবুকেই পেয়ে থাকি। এসব কারণে বলছিলাম, মাথাকে কেটে নয়, যথাযথ চিকিৎসা করিয়ে মাথাব্যথা দূর করতে হবে।
তানজিনা: হুম। ঠিক বলেছিস। সংযত ব্যবহার ও অভিভাবকের তত্ত্বাবধানই ফেসবুক সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
সনিয়া : ঠিক তাই। প্রতিটি জিনিসের ভালো ও মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। আমরা ভালোর দিকটা নিলেই হলো।
তানজিনা: এটা একদম ঠিক কথা।
সনিয়া : আচ্ছা, দোস্ত, আমাকে যেতে হবে। ভালো থাকিস। বিদায়। তানজিনা: তুইও ভালো থাকিস। বিদায়। কাল কলেজে দেখা হবে।
অথবা,
(খ) উত্তর:
রাজুর শৈশব
পড়ন্ত বিকেলে ঢাকার ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে রাজু ভাবে- কালের প্রবহমান স্রোত জীবনকে আজ কতদূরে নিয়ে এসেছে। কিন্তু শৈশবের স্মৃতিগুলো আজও অমলিন মনের মণিকোঠায়। সেই দুরন্ত শৈশবের অম্ল- মধুর স্মৃতি তাকে অতীতের কোলে টেনে নেয়। এই নাগরিক কোলাহল রাজুর একদম ভালো লাগে না। একঘেয়েমি, যান্ত্রিক এই মহানগরের জীবন যেন ডাঙায় তোলা মাছের মতো সর্বদা খাবি খায়। পালাতে ইচ্ছা হয় সব কিছু ছেড়ে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে রাজু তা পারে না। তবে শৈশবের অমলিন স্মৃতিগুলো যেন নাগরিক শ্বাসরুদ্ধতার মধ্যে এক পলকা নির্মল ও শুভ্র বাতাস।
রাজু ভাবে কত না সুন্দর ছিল তার শৈশব। গোপালপুর নামক ছোটো গ্রামে তার বেড়ে ওঠা। সেখানে ছিল না নগরের যান্ত্রিক ছোঁয়া। সকালে মা তাকে গরম ভাত খাইয়ে দিতেন নিজ হাতে। স্কুলের জামা-জুতা পরিয়ে দিতেন। তার খুদে হাত মুঠোয় করে রোজ স্কুলে দিয়ে আসতেন মা। কলেজিয়েট প্রাথমিক স্কুলে পড়ত সে। পড়াশুনায় ভালো হওয়ায় স্কুলের শিক্ষক তাকে খুব ভালোবাসতেন। স্কুলের শেখার বিষয়টা ছিল অতি আনন্দের। এখনকার বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীর মতো বইয়ের বোঝা তাকে বইতে হয়নি। কাঁধে ছিল না ব্যাগ বোঝাই বইয়ের চাপও।
সবাই ক্লাসে বসে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতো কখন বারোটা বাজবে। দপ্তরি আব্দুল হাই ঘণ্টার আওয়াজ দেবেন। ঘণ্টা বাজা মাত্র ভোঁ-দৌড়ে স্কুল-মাঠে হাজির হতো রাজু ও তার সহপাঠীরা। দুপুরের রোদকে থোড়াই কেয়ার করে তারা খেলায় মেতে উঠত। টিফিনের একটা ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর হয়ে থাকত বিদ্যালয়ের আঙিনা। আর স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে মায়ের হাতে তৈরি টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়ার স্মৃতি তো আজও তাকে অশ্রুসিক্ত করে তোলে। আজ সে কোথায় আর কোথায় তার স্কুল বন্ধু রহিম, জসিম, আল-আমিন, জীবন। ও রোমানরা।
স্কুল থেকে ফিরেই মায়ের হাতে খেতো রাজু। মা তাকে ঘুম পাড়াতে চাইতেন। কিন্তু পারতেন না। রাজু ঘুমের ভান করে থাকত। যেই না মা সরে যেতেন, অমনি রাজু পগারপার। মা আর তাকে খুঁজে পেতেন না। খুঁজে পেত তার বন্ধুরা। পাড়ার বড়ো মাঠে। ক্রিকেট খেলতে খুবই পছন্দ করত রাজু। ভালো ক্রিকেট খেলতো বলে কেবল বন্ধু মহলেই নয়, পাড়ার বড়ো ভাইয়েরাও রাজুকে খুব স্নেহ করতেন। পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়লেই রাজু। বাড়ি ফিরে যেত। ধুলো জড়িয়ে থাকত তার সারা গায়ে। মা তাকে জোর করে আবার গোসল করাতেন। গোসল করানোর পর তাকে ঘরে ঢুকতে দিতেন মা।
সন্ধ্যায় রাজুর বাবা অফিস থেকে ফিরতেন। রাজু তখন লক্ষ্মী ছেলের মতো বইয়ে মাথা গুজে স্কুলের পড়া তৈরি করত। সন্ধ্যায় দুরন্ত রাজু আর দুরন্ত থাকত না। বাবার কণ্ঠস্বরকে সে যমের চেয়ে বেশি ভয় করত। উচ্চস্বরে পড়ত সে। ঘুমে তার চোখ ধরে আসত। তবু ঘুমাতে পারত না সে বাবার ভয়ে। এই বুঝি বাবা চুলের মুঠি ধরে দিলেন এক ঝাঁকি। তখনকার দিনে প্রায় প্রতি রাতেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট অর্থাৎ লোডশেডিং হতো।
লোডশেডিং ছিল রাজুর প্রার্থনার বস্তু। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজুর ঘুমও উধাও হয়ে যেত। স্কুলের দুরন্তপনা এবং খেলার মাঠের চঞ্চলতা আবার তার ওপর ভর করত। বিদ্যুৎ গেলে তাকে পড়তে হতো না। দুপুরের খেলার মাঠের বদলে রাতে সে নেমে পড়ত বাড়ির আঙিনায়। উঠান যেন মুহূর্তেই শিশু-কিশোরদের মেলায় রূপ নিতো। 'কুক পালানো', 'ছোয়াছুঁয়ি', 'কানামাছি' ছিল রাজুদের রাতের খেলা। তবে 'কুক পালানো'ই ছিল তাদের প্রধান খেলা। কেউ কেউ আবার গল্পের ঝাঁপি খুলে বসতো। রূপকথার রাজকুমার-রাজকুমারীর জগতে ডুবে যেত অনেকেই।
বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত অবিরাম তারা খেলেই চলত। যেই বিদ্যুৎ আসত, অমনি সবাই উঠোন খালি করে এক দৌড়ে বাসায় ফিরে যেত। হাত-মুখ ধুয়ে ফের রাজু পড়তে বসতো। পড়ার চেয়ে ঘুমই তখন তাকে বেশি টানত। কতদিন যে না খেয়েই রাজু ঘুমিয়ে যেত তার কোনো ইয়ত্তা ছিল না। অবশ্য মা তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে হাতে তুলে খাইয়ে দিতেন। হঠাৎ বাসের কর্কশ হর্নে রাজু সম্বিৎ ফিরে পায়। শৈশবের স্বর্গ থেকে নেমে আসে নগর জীবনের বাস্তবতার মাটিতে। দীর্ঘশ্বাসে বুক তার ভারি হয়ে আসে। দ্রুত হেঁটে চলে রাজু। সামনের গলিতে গিয়েই যে তাকে বাস ধরতে হবে। ফিরতে হবে ইট-পাথরের বদ্ধ কৃঠিতে।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই
(ক)
জ্ঞানচর্চায় বিজ্ঞানের ভূমিকা দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপতৈরি কর।
অথবা,
(খ) প্রদত্ত উদ্দীপক অনুসরণে 'পানি-দূষণ' বিষয়ে একটি ক্ষুদে গল্প রচনা কর:-
লঞ্চ ভ্রমণের সময় বুড়িগঙ্গা নদীর পানির রং দেখে রাহাত বিস্মিত হয়।…………….
(ক) নিরাপদ সড়ক চাই বিষয়ে দুজনের মধ্যে একটি সংলাপ রচনা কর ।
অথবা,
(খ) "তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? উদ্দীপকটি অনুসরণে একটি খুদে গল্প রচনা কর।
(ক) একটি ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।
অথবা,
(খ) গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়ানো বিষয়ে একটি খুদেগল্প রচনা করো।
(ক) মেট্রোরেল ভ্রমণের আনন্দকে কেন্দ্র করে দুই বন্ধুর সংলাপ তৈরি কর।
অথবা, (খ) 'স্বপ্ন পূরণের আশা' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।