৮.দিনলিপি/প্রতিবেদন-১০
(ক) শীতের কোনো এক সকালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
অথবা,
(খ) “মাদকের অপর নাম মৃত্যু”- শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের উপযোগী একটি ভাষণ তৈরি কর।
(ক) উত্তরঃ
একটি শীতের সকাল
সেবার বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত হলো শীতের ছুটিতে সকলে মিলে অমিতের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাব । আহ্! গ্রামের বাড়ি শীত সকাল উপভোগ করার মজাই আলাদা । যে কথা সে কাজ । একদিন আমরা তিন বন্ধু মিলে সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে বন্ধু অমিতের গ্রামের বাড়ি বরিশালের উদ্দেশে রওনা দিলাম । অমিতের বাড়ি পৌঁছতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে গেল । চারদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকার এবং উত্তুরে হিমেল হাওয়াযুক্ত প্রবল শীতে আমরা জমে গেলাম । অমিতের পরিবার আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা ঘুমোতে গেলাম ।
সকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙল । তবে প্রচন্ড ঠান্ডায় লেপের ভেতর থেকে বের হতে পারলাম না । কিন্তু যখন পূবের জানালা দিয়ে বাইরে চোখ গেল তখন এক অপরূপ দৃশ্য দেখতে পেলাম । গাছপালাঘেরা বাড়িটি যেন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে । যতদূর দৃষ্টি যায় ধূসর-শুভ্র কুয়াশা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না । কিন্তু তার মধ্য দিয়ে সূর্যের মিষ্টি হাসির আলোক ছটায় শিশির-সিক্ত গাচের পাতা ঝলমল করছে । আমি শীত সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিছানা ছেড়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম । অদূর মাঠের পানে তাকাতেই দেখি ঘাসের শিষে জমে থাকা শিশির বিন্দু সূর্যের আলোয় মুক্তোর মতো জ্বল জ্বল করছে । বাহ্! কী চমৎকার দৃশ্য— চোখ ফেরাতে মন চায় না । হঠাৎ খেজুরের কাঁচা রসের মিঠে গন্ধ নাকে এলো । পেছনে ফিরে দেখি শিউলি হাঁড়ি ভর্তি রস এনে উঠোনে জমা করেছে । ইতোমধ্যে সমরেশ উঠে আমার কাছে এসে দাঁড়াল । শীতে ওকে কাঁপতে দেখে অমিত বলল, নে কাঁচা খেজুরের রস খা শীত চলে যাবে।' রস এত ঠান্ডা যে মুখে দিতেই দাঁত শিরশির করে উঠল । রস খাওয়ার পর ঠাণ্ডার ঝাঁকুনিতে আমাদের দাঁতে দাঁতে করতাল বাজতে শুরু হলো । তা নিয়ে হাসির ধুম পড়ে গেল ।
সকালে অমিতের মা আমাদের নানা প্রকারের পিঠা খেতে দিলেন । আহ্! মিষ্টি রোদে স্নাত হয়ে সে কি অমৃতই খেলাম! ভাঁপা, চিতই, পাটি-সাপ্টা, দুধ-পুলি প্রভৃতি পিঠা দিয়ে আমরা উদরপূর্তি নাস্তা করলাম । শীত সকালে হরেক রকমের পিঠার বিচিত্র স্বাদ আর সেই সঙ্গে একজন মমতাময়ী পল্লিমাতার সস্নেহ আপ্যায়নে আমি যারপরনাই মুগ্ধ হলাম । শীত সকাল উপভোগের এমন মজাদার অভিজ্ঞতার কথা আমার স্মৃতিতে আমৃত্যু অম্লান হয়ে থাকবে ।
(খ) উত্তরঃ
শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়, বিশেষ অতিথি ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন। মাদকাসক্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে ইতোমধ্যে আপনারা অবগত হয়েছেন। এই সর্বনাশা মরণ নেশার দানবীয় থাবায় পড়ে জাতি আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সুধীমন্ডলী,
আমরা সকলেই অবহিত যে বিশ্বব্যাপী মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে বিপ্লব শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরাও সেই আন্দোলন সংগ্রামে শামিল। মাদকের নেশা সর্বনাশা নেশা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এ নেশা বাংলাদেশের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ জাল বিস্তার করেছে। তরুণ সমাজ আজ এই মরণ নেশার ছোবলে পড়ে সর্বস্বহারা হচ্ছে এবং জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। তারা নেশার টাকা জোগাতে নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। হাইজ্যাক, খুন, জখম, সন্ত্রাস এসব নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানুষ বুদ্ধিবৃত্তির পূজারি, ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। তাই আমরা পারি সব রকম অন্যায়-অবিচার, মন্দ কাজ ত্যাগ করে সুখে-শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখতে। চাই পৃথিবীর মৃদু বাতাসে দাঁড়িয়ে নিশ্বাস নিতে, সবুজ বনবনানীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু শত হতাশা, ব্যর্থতা ও অশুভ ছায়া আমাদের এ আকাঙ্ক্ষাকে গলাটিপে হত্যা করে।
বিশেষ করে আমাদের যুবসমাজ আজ হতাশা ও ব্যর্থতার বালুচরে ডুবে নীতিহীন ও বিবেকবর্জিত হয়ে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, আফিম, পেথেডিন, চরস, হেরোইন, ফেনসিডিলের মতো মরণ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তির জন্য হতাশা, নিঃসঙ্গতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কুসংসর্গও কম দায়ী নয়।
সুধীবৃন্দ,
আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই মাদকদ্রব্যের অবাধ ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ফলে সব বয়সের, সব পেশার লোকদের মধ্যে এ সর্বনাশা নেশা বিস্তার লাভ করেই চলেছে। অনিবার্য ধ্বংস জেনেও নেশাগ্রস্তরা এ পথ পরিহার করছে না।
আমাদের যুবসমাজের বড় একটি অংশ মাদকাসক্ত হওয়ার ফলে আমাদের জনশক্তি ক্রমশ দুর্বল ও নির্জীব হয়ে পড়ছে। চিন্তার রাজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সম্পর্কের ক্রমাবনতি ঘটেছে। সমাজ তথা গোটা জাতি ধুঁকে ধুঁকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রিয় সুধী,
আপনাদের সকলের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, সমাজ থেকে এ দুষ্ট চক্রকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। প্রতিটি মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যাধি মাদকাসক্তির যথার্থ প্রতিকারের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে পারিবারিক প্রতিরোধ আরও জোরদার করতে হবে।
ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করতে হবে, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবে ন্যায়বিচার, মানবিক চেতনা ও আদর্শবাদ। ফিরে পাবে বাঙালি তথা মানবসভ্যতার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। গোটা জাতি রক্ষা পাবে এ সর্বনাশা মরণ নেশার কবল থেকে।
এই প্রত্যয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি। আল্লা হাফেজ।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই
(ক) তোমার কলেজে অনুষ্ঠিত মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনের একটি দিনলিপি রচনা কর।
অথবা,
(খ) তোমার কলেজে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন রচনা কর।
(ক) কলেজে প্রথম দিনের অনুভূতি ব্যক্ত করে একটি দিনলিপি লেখ।
অথবা,
(খ) তোমার, কলেজ ছাত্রাবাসের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।
(ক) চা বাগান দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করে দিনলিপি লেখ।
অথবা,
(খ) তোমার কলেজে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন সম্পর্কে-প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে একটি প্রতিবেদন পেশ কর।
(ক) 'জাতীয় গ্রন্থমেলায়' কাটানো একটি দিন সম্পর্কে একটি দিনলিপি লেখ।
অথবা,
(খ) 'যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে করণীয়'- এই সম্পর্কে তোমার মতামত জানিয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি কর।