বাংলাদেশ বিষয়াবলি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত 'সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী'। ব্যাখ্যা করুন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে "সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী" বাক্যটি দেশের মৌলিক অধিকার ও সমতার মূলনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে এবং এই অধিকারটি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সমান বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। এই নীতির ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
সমান অধিকার ও আইন
১. আইনের সামনে সমানতা: এই নীতির মূল ধারণা হলো, প্রতিটি নাগরিক, তার পরিচয়, অবস্থান বা ক্ষমতা নির্বিশেষে, আইনের সামনে সমান। অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি তার ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, জাতি, আর্থিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থান বা অন্য কোনো কারণে আইনের চোখে বৈষম্যের শিকার হবে না।
২. আইনের সমান আশ্রয়: এটি বোঝায় যে প্রতিটি নাগরিক আইনের দ্বারা সমানভাবে সুরক্ষিত হবে এবং তাদের আইনি সমস্যা সমাধানের জন্য একই ধরণের সহায়তা পাবে। এই নীতি অনুসারে, বিচারব্যবস্থার কাছে প্রতিটি নাগরিকের সমান প্রবেশাধিকার থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সমান বিচার পাওয়ার অধিকার থাকবে।
মূল উদ্দেশ্য
এই নীতির মূল উদ্দেশ্য হল:
বৈষম্য দূর করা: সমাজের যে কোন ধরনের বৈষম্য দূর করে প্রতিটি নাগরিককে সমান অধিকার ও সুযোগ প্রদান করা।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা: বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে সকল নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়া নিশ্চিত করা, যাতে তারা তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে।
সমাজের স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখা: যখন নাগরিকরা তাদের সমান অধিকার এবং আইনের সমান আশ্রয় পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকে, তখন সমাজে স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় থাকে।
ব্যাখ্যা
১. বিচারব্যবস্থায় সমান অধিকার: প্রতিটি নাগরিকের জন্য এটি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা আদালতে যেতে এবং তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে। এটি কোন ধরণের অপরাধ বা আইনি সমস্যার ক্ষেত্রেই হোক না কেন, বিচারব্যবস্থা সবসময় নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সঙ্গত থাকবে।
২. সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে সমান অধিকার: শুধু বিচারব্যবস্থা নয়, সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রেও আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার প্রযোজ্য হবে। যেমন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানে কোন প্রকার বৈষম্য চলবে না।
৩. সংরক্ষণ ব্যবস্থা: যদিও সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে পিছিয়ে পড়া বা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর জন্য বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে পারে যাতে তাদের ন্যায়বিচার ও সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হয়।
৪. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সকল নাগরিকের জন্য আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হবে এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না।
উপসংহার
"সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী" এই নীতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের একটি মৌলিক অধিকার। এটি দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমান অধিকার, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। এই নীতি দেশের সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে, যা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে সুশীল সমাজের ভূমিকা আলোচনা করুন।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বুঝায়? বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা রক্ষার শর্ত কী?
সংবিধান বলতে কী বুঝায়? বাংলাদেশ সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে কী কী পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তা আলোচনা করুন।
'রাষ্ট্রের পছন্দকৃত জীবন পদ্ধতিই সংবিধান।' বাংলাদেশ সংবিধানের সংশোধনীর আলোকে উক্তিটি ব্যাখ্যা করুন।