১২ প্রবন্ধ- নিবন্ধ রচনা
গ. বৃত্তিমূলক শিক্ষা
গ) উত্তর :
বৃত্তিমূলক শিক্ষা
ভূমিকা: শিক্ষাই মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। শিক্ষা মানুষকে জ্ঞানের আলো দান করে, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করে, মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বাড়ায় এবং সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে কবে সমদ্ধ। তাই শিক্ষাকে জীবনের সাথে সম্পৃক্ত হতে হয়। জীবনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষাই কর্মমুখী শিক্ষা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- 'আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার সঙ্গে জীবনের কোনো সংযোগ নেই'। বাস্তবিকই প্রচলিত শিক্ষা আমাদের জীবনকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে না। আজ পৃথিবী দ্রুতবেগে এগিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার সাথে কর্মমুখী শিক্ষার ফলেই তা সম্ভব হচ্ছে।
কর্মমুখী শিক্ষার বৈশিষ্ট্য: যে শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ কোনো একটি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষালাভ করে জীবিকার্জনের যোগ্যতা অর্জন করে, তাই কর্মমুখী শিক্ষা। অর্থাৎ বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষার অর্থ হচ্ছে একজন ব্যক্তিকে বিশেষ বৃত্তি বা কর্মে প্রশিক্ষিত করে তোলা। শিক্ষাকে হতে হবে আত্মপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক। অন্যথায় সে শিক্ষা হবে নিরর্থক। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশে বেকার সমস্যার সমাধান দিতে পারছে না। তাই দিন দিন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এ সমস্যার মোকাবিলা করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষা চালু করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রকারভেদ: কর্মমুখী শিক্ষা দ্বিবিধ। একটি হলো ডাক্তার, প্রকৌশলী এবং কৃষিবিদ যাঁরা বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে উচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁরা ইচ্ছেমতো স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত হতে পারেন। চাকরির আশায় তাঁদের বসে থাকতে হয় না। অন্যটি হলো সাধারণ কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা। এ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। সাধারণত প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক শিক্ষাই যথেষ্ট। এ শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কারোরই খাওয়া-পরার ব্যাপারে ভাবতে হয় না। এ জাতীয় শিক্ষার মধ্যে ধাত্রীবিদ্যা, সেলাইকাজ, কাঠমিস্ত্রির কাজ, দর্জির কাজ, ছাপাখানার কাজ, বই বাঁধাই, বিদ্যুতের কাজ, টেলিভিশন-বেতার-মোটর মেরামতের কাজ, ওয়েন্ডিংয়ের কাজ, কারখানায় শ্রমিকের কাজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও পরাধীন যুগের। এখনও ব্রিটিশদের কেরানি বানাবার শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশে প্রচলিত। কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ এখনও হয়নি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের কথা ওঠে ঠিকই, কমিশনও গঠিত হয়, এর রিপোর্টও প্রকাশিত হয় কিন্তু বাস্তবে তা প্রয়োগ করা হয় না। অবশ্য শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে দেশে মাধ্যমিক স্তরে 'এসবিএ' চালু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশের ৪৮ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণদানের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু। এর লক্ষ্য বাস্তবতার আলোকে . বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাদান। এ ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষাব্রতীদের অধিক সচেতন হতে হবে। কিন্তু আমাদের মনমানসিকতা সেই পুরোনো আমলের অযথা অহংকারের আভিজাত্য ত্যাগ করতে পারছে না। ফলে অনেক শিক্ষিত যুবক অভিশপ্ত বেকার জীবনযাপন করছে। গতানুগতিক গ্রন্থগত শিক্ষাব্যবস্থা ডিগ্রিধারী শিক্ষিত ব্যক্তি তৈরি করছে বটে, কিন্তু তা কর্মভিত্তিক না হওয়াতে ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে না। ফলে দেশ আজ ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে কর্মমুখী শিক্ষা প্রবর্তন অত্যাবশ্যক।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব: কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বহুবিধ। এ শিক্ষা গ্রহণের পর একজন শিক্ষার্থীকে চাকরির জন্য অপেক্ষা
করতে হয় না। এ শিক্ষা বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দারিদ্র্যমোচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এ শিক্ষা। এ শিক্ষা বুজি-রোজগারের পথ খুলে দেয় এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেয়। কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তিকে আমরা বিদেশে পাঠিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। তাই কর্মমুখী শিক্ষার আরও ব্যাপক প্রসার হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ জনবসতিপূর্ণ একটি দরিদ্র দেশ। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে জনসংখ্যাকে কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে শিল্প, বিজ্ঞান, কারিগরি উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধনের উপযোগী করে তুললে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত ও বেকার সমস্যার সমাধান হবে। কর্মমুখী শিক্ষার ওপর যত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তত সুদৃঢ় হবে। তাই আমাদের উচিত এ শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা।
প্রচলিত কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা: আমাদের দেশে বর্তমানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা প্রচলিত। তার সাথে কারিগরি, প্রকৌশলী, ডাক্তারি, ভকেশনাল ইত্যাদি কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থাও আছে। তরে তো প্রয়োজনের ফেলনায় অতি নগণ্য।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার: দেশের ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টায় অধিক পরিমাণ কর্মমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিশেষ করে কৃষিকার্যে সহায়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ওপর অধিক জোর দিতে হবে। স্বল্পমেয়াদি কোর্সে উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে আমাদের তরুণ বেকারদের সুদক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন কুটিরশিল্প, বয়নশিল্প, ডেইরিশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। তা ছাড়া পাটকল, চিনিকল, ইস্পাতশিল্প, জাহাজশিল্প ইত্যাদিতে দক্ষ কারিগর হিসেবে কাজ করতে পারে, এমন সহায়ক কর্মমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ওপরও জোর দিতে হবে। কর্মমুখী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুগোপযোগী নতুন নতুন বিষয়ে শিক্ষা প্রবর্তন করতে হবে।
উপসংহার: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। এ যুগে কর্মমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র কর্মমুখী শিক্ষাই দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারে। শিক্ষার উদ্দেশ্য শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ সাধন। সাধারণ শিক্ষায় মানসিক বিকাশ ঘটে আর কর্মমুখী শিক্ষায় শারীরিক উন্নতি আসে। এমনি করে জীবনের সাথে শিক্ষার সমন্বয় হয়ে জীবন হয় সমৃদ্ধ।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই