১২ প্রবন্ধ- নিবন্ধ রচনা
দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা।
ভূমিকা : একজন ছাত্র কেবল শিক্ষার্থীই নয়, দেশের একজন সম্ভাব্য সুনাগরিকও বটে। বিদ্যার্জনের মাধ্যমে নিজের জীবনকে গড়ে তােলার পাশাপাশি তারা নিজের দেশকেও গড়ে তােলার অনুপ্রেরণা পায়। নিজের অজান্তেই তাদের মনে দেশপ্রেমের মহৎ আদর্শ জেগে ওঠে। আর তাই দেখা যায়, ছাত্ররাই দেশ ও জাতির দুর্দিনে সর্বাগ্রে পাশে দাঁড়ায়। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালােবেসে ছাত্ররা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করে না। তাদের দেশপ্রেম অতুলনীয়।
ছাত্রসমাজের লক্ষ্য : বর্তমান যুগে অধ্যয়নই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা নয়। যদিও অধ্যয়ন ছাত্রের জন্য একান্ত আবশ্যক, তথাপি ঐ চিরাচরিত পুরানাে কথার মাঝে ছাত্রদের বিলিয়ে দিলে চলবে না। দেশকে ফুলে, ফলে সুশােভিত করে তােলার মাঝে নিজ জীবনকে বিকশিত করে তুলতে হবে। ছাত্রসমাজের মূল লক্ষ্য দেশকে মনের মতাে করে গঠন করা। প্রতিটি ছাত্রেরই জীবনের লক্ষ্য থাকে। অনেক বড়াে কবি, সাহিত্যিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, দার্শনিক ইত্যাদি হওয়া যেকোনাে একজন ছাত্রের জন্য লক্ষ্য হতে পারে । কিন্তু দেখা যায় যে, প্রত্যেকেই তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে নিজেদের কাজের মাধ্যমে পরিণামে দেশকেই গঠন করছে। তাই গভীরভাবে চিন্তা। করলে দেখা যায় যে, Students are the architect of the country. সুতরাং আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনে দেশ ও জাতির নেতা । তাই ছাত্রজীবন থেকে সমাজ গঠনের চিন্তা মাথায় রেখে ছাত্রসমাজকে গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং দেশ গঠনের জন্য জীবনকে গড়ে তুলতে হবে ।
দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের করণীয় : আমাদের দেশ যখন পরাধীন ছিল তখন স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ছাত্ররা এগিয়ে এসে গুলি, কামান, বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল । আজ আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। ভবিষ্যৎ জীবনে দেশের অগ্রগতি, দেশকে সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে গড়ে তােলা এবং দেশ-পরিচালনার জন্য ছাত্রসমাজকে তৈরি হতে হবে। কেননা, ভবিষ্যতে দেশ-পরিচালনার দায়দায়িত্ব ছাত্রসমাজকেই নিতে হবে। আজকের ছাত্র আগামী দিনের দেশ-পরিচালক, দেশ-নেতা এবং দেশের ভাগ্যবিধাতা । দেশের কৃষ্টি, দেশের কালচার, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি রক্ষা এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব ছাত্রদেরই। এ কারণেই তাে কবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনー
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে…।
পল্লি উন্নয়নে ছাত্রসমাজ : বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। কথায় আছে- ৮৫ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। তাই দেশের ছাত্রসমাজকে শহরের চাকচিক্যের মােহ ভুলে গ্রামে ফিরে যাও’ নীতি অবলম্বন করে পল্লি উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই ছাত্রদের বিশেষ এবং প্রধান দায়িত্ব পালন করা হবে । ছাত্রদেরকে গ্রামের কৃষকদের জন্য কৃষিকাজের সংস্কার সাধনের মাধ্যমে কৃষিজীবী মানুষের উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হতে হবে।
জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন : একজন সুস্থ মানুষ মানে একজন দেশ গড়ার সৈনিক। সুতরাং জনসাধারণের বিশেষত পল্লিগ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি বিধানে সচেষ্ট হতে হবে। কেননা তারা দেশের সিংহভাগ মানুষ যারা শিক্ষার আলাে থেকে বঞ্চিত। ছাত্ররাই এখানে সেবাকেন্দ্র খুলে সরকার থেকে টিকা, ইনজেকশন, বিভিন্ন প্রকার ঔষধ সংগ্রহ করে তা রােগীদের বিতরণ করে আর্তপীড়িতের সেবায় আত্মনিয়ােগ করে জনগণের অশেষ কল্যাণ সাধনে এগিয়ে আসতে পারে।
দুঃস্থ ও দুর্গত মানুষের সেবায় ছাত্রসমাজ : জগতে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রভূত মৌলিক জিনিসের চাহিদা আছে। একে অপরকে অর্থ দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সম্পদ দিয়ে, ভালােবাসা দিয়ে চাহিদাগুলাে পূরণ করা যেতে পারে। আর এ কারণেই জনসেবার আর এক অর্থ ‘বেঁচে থাকা, বাঁচিয়ে রাখা। শিক্ষা বিস্তারে ছাত্রসমাজ : শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ । অতএব, শিক্ষার কোনাে বিকল্প নেই। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করার মহান দায়িত্ব ছাত্রদের । নিরক্ষর বয়স্ক লােকদের এবং বালকদের জন্য গ্রামে ও শহরের মহল্লার জনগণের সহযােগিতায় নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষাদান করলে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর হতে পারে।
ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপনে ছাত্রসমাজ : ছাত্রদের মধ্যে কখনাে কোনােরূপ জাতিগত বা সম্প্রদায়গত অনৈক্য বা আঞ্চলিকতার মনােভাব থাকা উচিত নয়। তাদেরকে সকল প্রকার সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকে পরস্পর ঐক্য এবং প্রীতি বজায় রেখে চলাফেরা ও নিজেদেরকে গড়ে তােলার জন্য চেষ্টা করতে হবে । আর তাই কবিও আমাদেরকে শুনিয়েছেনー
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই ,
নহে কিছু মহীয়ান…।
শিল্প, সংস্কৃতি উন্নয়নে ছাত্রসমাজ : এ বিষয়ে ছাত্রসমাজের জ্ঞানের বিষয়কে অস্বীকার করা যায় না। ছাত্ররা বিভিন্ন সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের ভ্রান্ত ধারণা দূর করে আদর্শ সমাজ ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলে। দেশের সমৃদ্ধি লাভের সাধনা করতে পারে। মনীষীর ভাষায়‘একটি দেশকে বা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তার শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধ্বংসই যথেষ্ট। তাই দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ সাধনে তৎপর হওয়া ছাত্রদের অন্যতম কর্তব্য।
দেশ রক্ষায় ছাত্রসমাজ : মানুষ যেখানে ভূমিষ্ঠ হয় এবং শিশুকাল থেকে যেখানে লালিত-পালিত হয়, সে স্থান তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় । নিজ জন্মভূমির প্রতি এ যে মােহ বা প্রীতি, একেই বলে স্বদেশপ্রেম । ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একমাত্র ছাত্রসমাজই প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল । এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, দেশের স্বাধীনতা পেতে যে ত্যাগ করতে হয়েছে এখন। দেশকে গড়ে তােলার জন্য এর চেয়ে অধিক ত্যাগ অবশ্যই প্রয়ােজন। এজন্য আমাদের ছাত্রসমাজকে অবশ্যই তৈরি থাকতে হবে।
বহিঃশত্রুর আক্রমণ রােধ : ছাত্রদের প্রয়ােজনে স্বেচ্ছায় দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগে যােগদান করে সৈন্যবাহিনীর সাথে নিজেদের যুক্ত করে সবার কাজে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করা উচিত। দেশ ও জাতির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেকোনাে ব্যাপারে তাদের ঝাপিয়ে পড়ার মন-মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে ।
স্বৈরাচার বিরােধী আন্দোলন : এদেশের ইতিহাসে স্বৈরাচারী শাসনের দৃষ্টান্ত রয়েছে। স্বৈরাচারের পতনের পেছনে ছাত্রসমাজের বিশেষ ভমিকা ছিল। আগামী দিনগুলােতেও ছাত্রসমাজকে দেশ ও জাতির স্বার্থে দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহার : দেশের দুরন্ত সৈনিক বীর ছাত্ররাই উজ্জ্বল স্বাধীনতার প্রতীক। আজ এ স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য প্রয়ােজন দেশকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তােলা। দুঃখের বিষয় হচ্ছে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও আমরা পারিনি এদেশকে শক্তিশালীভাবে গঠন করতে। আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ সচেতন হলে, দেশের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করলে এবং দেশ গঠনে সঠিকভাবে কাজ করলে বাংলাদেশের উন্নতি খুব দ্রুতই ত্বরান্বিত হবে। তাই ছাত্রদের সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দেশের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই