১২ প্রবন্ধ- নিবন্ধ রচনা
পোশাক শিল্প: সমস্যা ও সম্ভাবনা
উত্তর:
ভূমিকা: বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশ নয়। তথাপি যেসব শিল্পে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে তাদের মধ্যে পোশাকশিল্পের নাম সর্বাগ্রে। বাংলাদেশের পোশাক-শিল্পমান বিশ্বমানের। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের শতভাগই রপ্তানিমুখী। বিশ্ববাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ তার মোট রপ্তানি আয়ের ৮১.২% এর বেশি অর্জন করে তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে।
পোশাকশিল্পের অতীত অবস্থা: প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং সরকারি
পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে পোশাক বা বস্ত্রশিল্প সম্প্রসারিত হয়নি। ভারত ভাগের সময়, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের দিকে উভয় পাকিস্তান মিলে কাপড়ের কলের সংখ্যা ছিল ১৪টি। ১৯৭০ সাল নাগাদ তা ১৪০টিতে উন্নীত হয়। যার মধ্যে মাত্র ৪৩টি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বা বর্তমান বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের কাপড়ের বাজার তৈরিই ছিল এ বৈষম্যের মূল কারণ।
পোশাকশিল্পের বর্তমান অবস্থা: স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে পোশাকশিল্পে
বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কর্মে নিয়োজিত। এসব শ্রমিকের ৮৪% নারী। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, টঙ্গী এলাকায় প্রধান কেন্দ্রগুলো অবস্থিত। আর্দ্র জলবায়ু, নদী, সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগের সুব্যবস্থা, সুদক্ষ শ্রমিক ও প্রয়োজনীয় মূলধনের প্রতুলতা এসব অঞ্চলের পোশাকশিল্প উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা, কুমিল্লা, কালীগঞ্জ এবং গোয়ালন্দে কাপড়ের কল রয়েছে। এছাড়া তাঁতশিল্প তো রয়েছেই। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বেশ উন্নতমানের তাঁতের কাপড় তৈরি হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের অবদান: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ:
ক. পোশাকশিল্প থেকে রপ্তানি আয়: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে বিশেষ করে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায়
৮১.২% আসে পোশাকশিল্প থেকে।
খ. বেকার সমস্যা সমাধানে অবদান: পোশাকশিল্প বাংলাদেশের বেকার সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে পোশাকশিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। বিশেষ করে
আমাদের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ করে দিয়েছে এ শিল্প। নারীদের যোগ্যতানুযায়ী কাজের ধরন নির্ধারণ করে তাদের এ শিল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা নারীরা তাদের শ্রম বিনিয়োগ করে এ শিল্পের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে।
গ. দ্রুত শিল্পায়নে অবদান: পোশাকশিল্প আমাদের দেশে শিল্পের দ্রুত
প্রসার ঘটাচ্ছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করেই স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং এবং প্রিন্টিংশিল্প গড়ে উঠছে। শুধু তা-ই নয়, প্যাকেজিং, গামটেপ, জিপার, বোতাম ও বগলস শিল্পের প্রসারও ঘটছে এ শিল্পের ওপর নির্ভর করেই।
ঘ. অন্যান্য অবদানঃ এ শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কাজে ব্যবহারের জন্য পরিবহন সেক্টর তার কার্যক্ষমতা প্রসারের সুযোগ লাভ করেছে। এ শিল্পে বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো লাভবান হচ্ছে এবং বিমা কোম্পানির প্রিমিয়াম বাড়ছে।
আমদানিকারক দেশসমূহ: বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপরই রয়েছে জার্মানির স্থান। এরপর যথাক্রমে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পেন ও অন্যান্য দেশ।
পোশাকশিল্পের বাধা: বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রে বড়ো বাধাগুলো নিম্নরূপ:
অস্থিতিশীল রাজনীতি: দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতি পোশাকশিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিমাণমতো ও সময়মতো উৎপাদন ও অর্ডার অনুযায়ী কাজ সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা হরতাল ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কার্যাবলির জন্য চুক্তি অনুযায়ী সময় মতো কাজ করতে না পারায় অনেক সময় কাজের অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। বাতিলকৃত কাজের ফলে লোকসান দিয়ে তখন এ শিল্পকে চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়তে হয়।
দক্ষ শ্রমিকের অভাব: পোশাকশিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভাব একটি বড়ো
সমস্যা। এ শিল্পের সিংহভাগ শ্রমিকই নারী। নারীদের প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই এ শিল্পকে অদক্ষ নারী শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হয়। শুধু তা-ই নয়, এ ক্ষেত্রে দক্ষ পুরুষ শ্রমিকেরও অভাব রয়েছে।
কাঁচামাল সমস্যা: কাঁচামাল এ শিল্পের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা।
দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল না থাকায় বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। এতে করে রপ্তানি আয়ের একটা বিরাট অংশ খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় আমদানীকৃত কাঁচামাল নিম্নমানের হওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক বিদেশি ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়া: যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সালে পোশাক আমদানি ক্ষেত্রে
কোটা পদ্ধতি তুলে দিলে এ শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক শিল্প- প্রতিষ্ঠান এতে করে বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া শুল্ক জটিলতা, আইটেমের বৈচিত্র্যহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে বিরূপ প্রভাব, দুর্বল শিল্পনীতি, আর্থিক মন্দা ইত্যাদি সমস্যা এ শিল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
সমস্যা সমাধানে করণীয়: নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পোশাকশিল্পের সমস্যা সমাধানে বিবেচ্য হতে পারে:
ক. দ্রুত রপ্তানির জন্য কার্গো বিমান চার্টার করার অনুমতি প্রদান;
খ. নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা;
গ. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা;
ঘ. কোটানীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির অবসান;
ঙ. প্রয়োজনীয় কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ;
চ. ইপিজেড-এর মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদান।
উপসংহার: পোশাকশিল্প আমাদের গর্ব, আমাদের সম্পদ। দেশের বাইরে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের পোশাকশিল্পের প্রদর্শনী দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছে। তাই এ শিল্পের সকল সমস্যা সমাধানে এবং জাতীয় অর্থনীতির এ অন্যতম সফল অংশকে গতিশীল রাখতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বস্তুকলের পাশাপাশি তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব অনুধাবন করে এর ব্যবহার বজায় রাখতে হবে।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই