বাংলাদেশ বিষয়াবলি
“বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে জোট গঠন নতুন কোনো ঘটনা নয়” –আলোচনা করুন ।
বর্তমান আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। রাজনৈতিক দল ব্যতীত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা কল্পনা করা যায় না। গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে রাজনৈতিক দল, মানুষের সমস্যা সমাধান ও অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । রাজনৈতিক দল হলো গণতন্ত্রের মূল চালিকা শক্তি।
সাধারণ ভাষায়- রাজনৈতিক দল বলতে এমন একদল নাগরিক সমষ্টিকে বোঝায় যারা কতগুলো নির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে বৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে । R.M.Maclver এর মতে, “নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে কোন সংঘবদ্ধ জনসমাজে বৈধ উপায়ে শাসন ক্ষমতা দখল করতে চেষ্টা করলে তাকে রাজনৈতিক দল বলে” ।
অধ্যাপক জে এস সুম্পিটার বলেন,“রাজনৈতিক দল এমন একটি জনসংঘ যার সদস্যগণ রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে” ।
Prof. Edmund Barke, "Political party is a body of men united for promoting by their joint undeavours the national interest upon some particular principle in which they are all agreed." এভাবে বলা যায় রাজনৈতিক দল হলো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার আদি স্তম্ভ। আর এর মাধ্যমেই রাষ্ট্রের পুরো যন্ত্রকৌশল আবর্তিত হয় । রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল সরকার গঠন করা। আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি দল তার সমমনা বিভিন্ন দলের সাথে জোট গঠন করে। দলীয় পদ্ধতির রাজনীতি তিন প্রকারের হয়ে থাকে, যেমন-একদলীয়, দ্বিদলীয় এবং বহুদলীয়। বাংলাদেশের রাজনীতি এই তিনটি ধারাকেই অনুসরণ করে চলে আসছে-কখনো একাই পথে চলে, আবার কখনো সঙ্গী খুঁজে নেয় । এই একা চলা বা সঙ্গে অন্যদের নেওয়ার নীতিতেও নানা ধরনের যোগ-বিয়োগ পরিলক্ষিত হয়। কখনো একা চলতে পারাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ালে সঙ্গী নিয়ে শক্তি বাড়ানোতে এক ধরনের চিন্তা-চেতনা কাজ করে। অন্যদিকে এককভাবে সরকার গঠন সম্ভব হলেও অন্য রাজনৈতিক বোঝাপড়া থেকে সাথি নেওয়ার বিষয়টিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে দৃশ্যমান ।
জোটের রাজনীতি :
বাংলাদেশের গত ৪৪ বছরের রাজনীতিতে 'জোটের রাজনীতি' প্রথম দিকে গুরুত্ব না পেলেও, ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান ও '৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এ ‘জোট রাজনীতি'র গুরুত্ব পেয়েছে বেশি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই যে কোনো একটি একক দলের পক্ষে সরকার পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো যখন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তখন প্রথম বারের মতো মুসলিম লীগ ও সদ্যগঠিত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ একটি সংসদীয় ঐক্য গঠন করলেও, পরে সে ঐক্য টিকে থাকে নি। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী প্রথম বারের মতো ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের ব্যানারে সংগঠিত হয়েছিল এবং সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটের রাজনীতি শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে।
জোটের রাজনীতি যদি পর্যালোচনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের রাজনীতি স্পষ্টই দুটি ধারায় বিভক্ত । যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তথা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী তাদের একটি জোট। এ জোটের মূল শক্তি বিএনপি। এ জোট চারদলীয় জোট হিসেবে পরিচিতি পেলেও তা ১৮ দলীয় জোট হয় এবং বর্তমানে ২০ দলীয় জোট। যদিও এ ২০ দলীয় জোটে অনেক দল রয়েছে, যা ব্যক্তিনির্ভর, প্যাডসর্বস্ব এবং যাদের কোনো সংসদীয় ভিত্তি নেই। অন্যদিকে যারা বাঙালি সংস্কৃতি, ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাসী এবং সমাজতন্ত্রী, তারা ১৪ দলীয় জোট বা মহাজোটের ব্যানারে সংগঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ এ মহাজোটের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিক রাজনীতি করার প্রবণতা আমরা লক্ষ করি। ওই
নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে, জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। পরে জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম এরশাদ দলীয় মন্ত্রীকে (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) পদত্যাগ করার আহ্বান জানালেও, তিনি পদত্যাগ করেন নি। এ নিয়ে ওই সময় জাতীয় পার্টি ভেঙে যায়। এ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির একটি ধারা (প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জু) বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে আছে এবং সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্বও রয়েছে (বিজেপি)।
জোট রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করলে সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশে সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাস আলোচনা করা প্রয়োজন । ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার আওতায়। এরপর ১৯৭৯ থেকে '৯১ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার পদ্ধতির অধীনে। তবে '৯৬ থেকে সর্বশেষ ২০১৮ পর্যন্ত পর পর পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায়।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩ আসনে জিতে সরকার গঠন করে। এর মধ্যে জাসদ ১, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ১ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৫টি আসন পান। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২০৭টি আসন পায় । এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯, আওয়ামী লীগ (মিজান) ২, জাসদ ৮, মুসলিম লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ ২০, ন্যাপ (মোজাফ্ফর) ১, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ২, বাংলাদেশ গণফ্রন্ট ২, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ১, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১, জাতীয় একতা পার্টি ১ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসনে জিতেন। ওই সময় কোনো জোটের রাজনীতি ছিল না এবং ইসলামপন্থী কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ও অংশগ্রহণ ছিল না। স্বাধীনতা আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা, শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ইত্যাদি নানা কারণে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী হতে সাহায্য করে। ওই সময় কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জোট গঠনের কথা না বললেও, নির্বাচনের পরপরই (ন্যাপ-মো.) ও কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা, যারা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনীতির সমর্থক ছিলেন, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার আহ্বান জানান। '৭৩ সালের মে মাসে ৩টি সংগঠনের (আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপ-মো.) ছাত্র সংগঠনগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠন করে। ধীরে ধীরে তা রাজনৈতিক সংগঠনের দিকে গড়ায়। ৫ আগস্ট, ১৯৭৩ কুমিল্লায় ও ২৬ আগস্ট বগুড়ায় ত্রিদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। সেপ্টেম্বরে সরকার ঘোষণা করে যে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিকে সামনে রেখে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে নিয়ে একটি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হবে। অক্টোবরে বহুল আলোচিত 'গণঐক্যজোট' গঠিত হয়। ১৯ সদস্যবিশিষ্ট যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তাতে ১১ জন · ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে, ৫ জন ন্যাপ (মো.) আর ৩ জন সিপিবি থেকে ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ‘নয়া রাজনীতির' আলোকে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৭৯) আমরা এই গণঐক্যজোটের কোনো প্রতিফলন লক্ষ করি নি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে আবদুল মালেক উকিল ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে অংশ নেয়। এমনকি ন্যাপ (মো.) একতা পার্টি, জাসদ, যারা একসময় মিত্র ছিল আওয়ামী লীগের, তারাও আলাদাভাবে নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগের মালেক গ্রুপ ২৯৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয় ৩৯টিতে। আর মিজান গ্রুপ ১৮৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয় মাত্র ২টিতে। ন্যাপ (মো.) ১ আসন, জাসদ ৮ আসন পায়। এখানে লক্ষণীয়, মুসলিম লীগ ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামী) ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ২৬৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০টিতে বিজয় হয় । তারা ওই সময় নবগঠিত বিএনপির সঙ্গে কোনো ঐক্য করে নি। সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে ১৯৮৬ ও '৮৮ সালে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল । যদিও ওই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোনো ফ্রন্টও গঠিত হয় নি। '৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (৭৬ আসন), জামায়াতে ইসলামী (১০ আসন), যুক্ত ন্যাপ (৫ আসন), সিপিবি (৫ আসন), ন্যাপ (মো.) (২ আসন) অংশ নিয়েছিল। কিন্তু কোনো জোট করে নি।
পরিবর্তিত রাজনীতির আলোকে পঞ্চম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯১ সালে, যা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এ নির্বাচনের আগে ও পরে জোটের রাজনীতি নতুন রূপ পায়। বিএনপি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়, বিজয়ী হয় ১৪১টিতে, আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয় ২৬৪ আসনে (৮৮ আসন), বাকি আসন সিপিবি, ন্যাপ, বাকশাল প্রার্থীদের ছেড়ে দেয় । জামায়াতে ইসলামী ২২২ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ১৮টিতে, আর জাতীয় পার্টি তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২৭২ আসনে প্রার্থী দিয়ে তারা বিজয়ী হয় ৩৫টিতে । আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে বাকশাল ৫ আসনে, সিপিবি ৫ আসনে বিজয়ী হয়েছিল । নির্বাচনের পর সরকার গঠন প্রশ্নে বিএনপি জামায়াতের সমর্থন নিয়েছিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যাদের সমর্থন দিয়েছিল, তাদের নিয়েও কোনো ঐক্যজোট করে নি। '৯৬ সালের নির্বাচন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই প্রথমবারের মতো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৪৬টিতে বিজয়ী হয়। অন্যদিকে তাদের মিত্র বলে পরিচিত জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২৯৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় ৩২টি, অন্য 'মিত্ররা' কোনো আসন পায় নি। বিএনপি ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় ১১৬টি। তাদের ‘মিত্র' জামায়াতে ইসলামীও ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় মাত্র ৩টি । দৃশ্যপট আবারো পাল্টে যায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ২০০১ সালে। এবারে বিএনপি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে (শরিক জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি নাজিউর)। বিএনপি প্রার্থী দেয় ২৫২ (বিজয়ী ১৯৩), জামায়াত প্রার্থী দেয় ৩১ (বিজয়ী ১৭), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ছিল ৭ (বিজয়ী ২) আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল ১১ (বিজয়ী ৪)।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই
১৯৪৭ উত্তর সময়ে বাংলাদেশ অঞ্চলে বাংলা সাহিত্যের যে বিকাশ সাধিত হয়েছে এর বর্ণনা দিন।
স্থানীয় সরকার পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ব্যতীত সত্যিকার অর্থে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়- বিশ্লেষণ সহকারে ব্যাখ্যা করুন।
বর্তমানে গ্যাস সংকট মোকাবেলায় সরকার কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? সম্প্রতি বাংলাদেশ কর্তৃক সমুদ্র বিজয় এতে কী প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী? বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের দুর্বল দিকগুলো আলোচনা করুন।