বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার লাইন সংখ্যা কত?

“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কবিতা

“এতক্ষণে”-অরিন্দম কহিলা বিষাদে, 
“জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল 
রক্ষপুরে! হায়, তাত, উচিত কি তব
এ কাজ? নিকষা সতী তোমার জননী! 
সহোদর রক্ষঃশ্রেষ্ঠ! শূলিশম্ভুনিভ 
কুম্ভকর্ণ! ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী! 
নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে? 
চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে? 
কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরুজন তুমি 
পিতৃতুল্য। ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে, 
পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে, 
লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে।” 
উত্তরিলা বিভীষণ, “বৃথা এ সাধনা, 
ধীমান্। রাঘবদাস আমি; কী প্রকারে 
তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতে 
অনুরোধ?” উত্তরিলা কাতরে রাবণি;- 
“হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে! 
রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে 
আনিলে এ কথা, তাত, কহ তা দাসেরে! 
স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে; 
পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি 
ধূলায়? হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে 
কে তুমি? জনম তব কোন মহাকুলে? 

কে বা সে অধম রাম? স্বচ্ছ সরোবরে 
করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ-কাননে 
যায় কি সে কভু, প্রভু, পঙ্কিল সলিলে, 
শৈবালদলের ধাম? মৃগেন্দ্র কেশরী, 
কবে, হে বীরকেশরী, সম্ভাষে শৃগালে 
মিত্রভাবে? অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি, 
অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে। 
ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষ্মণ; নহিলে 
অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে? 
কহ, মহারথী, এ কি মহারথীপ্রথা? 
নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে 
এ কথা! ছাড়হ পথ; আসিব ফিরিয়া 
এখনি! দেখিব আজি, কোন্ দেববলে, 
বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি! 
দৈব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছে, 
রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, পরাক্রম দাসের! কী দেখি 
ডরিবে এ দাস হেন দুর্বল মানবে? 
নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রগল্ভে পশিল 
দম্ভী; আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে। 
তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে 
বনবাসী! হে বিধাতঃ নন্দন-কাননে 
ভ্রমে দুরাচার দৈত্য? প্রফুল্ল কমলে 
কীটবাস? কহ তাত, সহিব কেমনে?

হেন অপমান আমি,-ভ্রাতৃ-পুত্র তব? 
তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?” 
মহামন্ত্র-বলে যথা নরশিরঃ ফণী, 
মলিনবদন লাজে, উত্তরিলা রথী 
রাবণ-অনুজ, লক্ষি রাবণ-আত্মজে; 
“নহি দোষী আমি, বৎস; বৃথা ভর্ৎস মোরে 
তুমি! নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা 
এ কনক-লঙ্কা রাজা, মহিলা আপনি! 
বিরত সতত পাপে দেবকুল; এবে 
পাপপূর্ণ লঙ্কাপুরী; প্রলয়ে যেমতি 
বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে! 
রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী 
তেঁই আমি। পরদোষে কে চাহে মজিতে?” 
রুষিলা বাসবত্রাস! গম্ভীরে যেমতি 
নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্র কোপি, 
কহিলা বীরেন্দ্র বলী,- “ধর্মপথগামী, 
হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে 
তুমি;- কোন্ ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি, 
জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি, –এ সকলে দিলা জলাঞ্জলি? 
শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি 
পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি 
নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা! 
এ শিক্ষা, হে রক্ষোবর, কোথায় শিখিলে? 
কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা! হেন সহবাসে,
হে পিতৃব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে? 
গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।” - মোট ৭২টি লাইন সংখ্যা আছে। 

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ টপিকের ওপরে পরীক্ষা দাও