বাংলাদেশ বিষয়াবলি
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমির বিভিন্ন পর্যায় উল্লেখ করুন।
১৯৪৭ সালের পাকিস্তান রাষ্ট্র: ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট রাতে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। জন্ম নেয় ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র। পূর্ববাংলা পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ অংশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। মূল পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তবে শুরু থেকেই পাকিস্তানের শাসনভার পশ্চিম পাকিস্তানের ধনিক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় পূর্ব বাংলার সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠি নিজেদের করায়ত্ত করতে শুরু করে। এর বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণ প্রতিবাদ ও আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলে।
ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮-৫২)
◆ প্রথমত: ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে ও রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহারের দাবি জানানো হলে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এর বিরোধীতা করে বলেন, পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র হওয়ার দরুণ একমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হতে পারে। এর প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ ১১ মার্চ দেশব্যাপী ধর্মঘট, বিক্ষোভ মিছিল, শোভাযাত্রার অয়োজন করলে ভাষা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত ঘটে।
◆ দ্বিতীয়ত: ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এবং ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন, "Urdu and only urdu shall be the state language of pakistan." ছাত্ররা উক্ত ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ করে এবং স্লোগান দেয়, 'না-না বাংলাই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা'।
◆ তৃতীয়ত: ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন ঘোষণা করেন "উদু'ই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা"। এর বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানানো হয়।
পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন সরকার ২০শে ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে ঢাকার সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” শ্লোগান দিয়ে রাজপথে শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিতে রফিক, শফিউর, সালাম, বরকত, জব্বার প্রমুখ তরুণ শহিদ হন এবং অনেকেই গ্রেফতার হয়।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন: ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বিরোধী দলসমূহ ঐক্যবদ্ধ ভাবে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে এবং ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। এই বিজয় পরবর্তীকালে বাঙালিদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র: ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণীত হয়। এটি গৃহীত হয় ২৯শে ফেব্রুয়ারি এবং কার্যকর হয় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস থেকে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো- ইসলামী প্রজাতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, মৌলিক অধিকার, বাংলা ও উর্দু উভয়ই রাষ্ট্র ভাষা।
১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন: ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর এক ঘোষণাবলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সামরিক শাসন জারি করেন। তিনি সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানকে। ২৭ অক্টোবর ১৯৫৮ ইস্কান্দার মির্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল আইয়ুব খান। তিনি সামরিক শাসন প্রত্যাহার করেন ২৩ মার্চ, ১৯৬০ সালে।
আইয়ুব শাসন বিরোধী আন্দোলন ১৯৬২: আইয়ুব শাসন বিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে মূলত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে-
◆ ১৯৬২ এর আইয়ুবী শাসনতন্ত্র
◆ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতার।
◆ হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রির্পোট
বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উদ্ভব ঘটে মূলত ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ, ১৯৬৫ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ: ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয় পাক-ভারত যুদ্ধ। ১৭ দিনব্যাপী এ যুদ্ধে বাঙালি সৈন্যরা অসম্ভব সাহসিকতা দেখায়।
১৯৬৬ সালের ছয় দফা ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পূর্ববাংলার নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বাংলার জনগণকে কিছুটা অবাক করে। ফলে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের জন্য বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়। মূলত ১৯৪৭ সালের পরবর্তী সময়কালে পূর্ববাংলার প্রতি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে যে জনমত সৃষ্টি হয় তারই বহিঃপ্রকাশে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের ভিত প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা প্রণয়ন করেন।
গণঅভ্যুথান (১৯৬৮-৬৯): ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র পরিকল্পনার কথা ফাঁস হয়ে গেলে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা হয়। মামলার শিরোনাম ছিলো 'রাষ্ট্রদ্রোহিতা বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য'। বিদেশি আইনজীবীদের পরামর্শক্রমে আওয়ামী লীগ সাড়া দেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ৫ জানুয়ারি '৬৯ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষিত হয়। ধারাবাহিক আন্দোলনে ছাত্র-শিক্ষক-জনতার মৃত্যুতে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। শাসক বিরোধী প্রচণ্ড আন্দোলন এবং শেখ মুজিবকে মুক্ত করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। দেশব্যাপী শুরু হয় প্রচণ্ড গণআন্দোলন।
ভয়াবহ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি '৬৯ পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি '৬৯ ছাত্রনেতারা শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করে।
১৯৭০ এর নির্বাচন: ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন (৭টি মহিলা আসনসহ) লাভ করে। ১৭ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ৩০০ টির মধ্যে ২৮৮ টি আসন আওয়ামী লীগ পায়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা প্রদান করতে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু করে।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। ২ মার্চ এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে জনগণকে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান। ২৫ মার্চ নিরস্ত্র জনগণের উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায়।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ১০ এপ্রিল মুজিব নগর সরকার গঠন এবং স্বাধীনতার সাংবিধানিক ঘোষণাপত্র গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ নয় মাস এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই
১৯৪৭ উত্তর সময়ে বাংলাদেশ অঞ্চলে বাংলা সাহিত্যের যে বিকাশ সাধিত হয়েছে এর বর্ণনা দিন।
স্থানীয় সরকার পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ব্যতীত সত্যিকার অর্থে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়- বিশ্লেষণ সহকারে ব্যাখ্যা করুন।
বর্তমানে গ্যাস সংকট মোকাবেলায় সরকার কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? সম্প্রতি বাংলাদেশ কর্তৃক সমুদ্র বিজয় এতে কী প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী? বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের দুর্বল দিকগুলো আলোচনা করুন।