মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ধারণা (প্রথম,দ্বিতীয়, তৃতীয়)
দেহের প্রতিরক্ষায় ত্বকের ভূমিকা-
নিচের কোনটি সঠিক?
ত্বক (Skin/Integument; integere = to cover) : ত্বক চারভাবে একটি কার্যকর প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে: (i) গাঠনিকভাবে কেরাটিনময়, বায়ুরোধী, জলাভেদ্য (waterproof) ও অধিকাংশ পদার্থের প্রতি অভেদ্য; (ii) সবসময় প্রতিস্থাপিত হয়; (iii) এসিডিক pH; এবং (iv) ঘামগ্রন্থি ও স্বেদগ্রন্থি থেকে উৎপন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি ।
মানবদেহকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রথমে দরকার দেহে জীবাণুর প্রবেশ বন্ধ করা। একাজে প্রতিবন্ধক হিসেবে ত্বক (skin) অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এ কারণে প্রথম সারির প্রতিরক্ষক হিসেবে ত্বক সুপরিচিত । এটি অন্যতম নন-স্পেসিফিক (non-specific) বহিঃস্থ প্রতিবন্ধক। যে প্রতিবন্ধক কোনো জীবিত বস্তুকে সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত না করতে পেরে তাকে জীবাণু মনে করে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে ধরনের প্রতিবন্ধককে অনির্দিষ্ট বা নন-স্পেসিফিক প্রতিবন্ধক বলে । নিচে দেহের প্রতিরক্ষায় ত্বকের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. ত্বকের বাইরের স্তরটি এপিডার্মিস (epidermis)। এটি একটি হর্ণি স্তর যা মৃত ও চাপা কোষে গঠিত এবং স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম (stratum corneum) নামে পরিচিত। এটি জীবাণুরোধী স্তর এবং ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের প্রবেশে জীবাণু নেই যা অক্ষত ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে ।
ভৌত প্রতিবন্ধক (physical barrier) হিসেবে কাজ করে। কতকগুলো ভাইরাস ছাড়া এমন কোনো রোগ সৃষ্টিকারী
২. মানবত্বকে অক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সব সময়ই থাকে, কিন্তু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সেখানে বাঁচতে পারে না । কারণ ত্বকের স্বেদ বা সিবেসাস গ্রন্থি (sebaceous gland) ও ঘাম গ্রন্থি ( sweat gland) থেকে যথাক্রমে যে তেল (বা স্বেদ) ও ঘাম ক্ষরিত হয় তা ত্বককে এসিডিক (pH 3.0-5.0) করে তুলে। এমন পরিবেশে জীবাণু বাঁচতে বা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না । অন্যদিকে, ত্বকে যে সব অক্ষতিকর বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে সেগুলোও যে এসিড ও বিপাকীয় বর্জ্য ত্যাগ করে সে সব পদার্থও ত্বকের উপরে ব্যাকটেরিয়া দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। স্বেদ ও ঘাম গ্রন্থির ক্ষরণেও জীবাণুনাশক (অ্যান্টিবায়োটিক) পদার্থ থাকে (যেমন ডার্মিসাইডিন নামে পেপটাইড)। এসব পদার্থ থাকায় মানুষের ত্বক আত্ম-রোগজীবাণুনাশক অঙ্গ (self-disinfecting organ) হিসেবে কাজ করে ।
৩. মানুষের দেহগাত্রে স্বাভাবিকভাবে বসবাসরত ব্যাকটেরিয়া অন্যান্য অণুজীবের সংক্রমণ আশঙ্কা থেকে দেহকে রক্ষা করে । যেমন-যোনিতে যে ব্যাকটেরিয়া বাস করে তা ল্যাকটিক এসিড ক্ষরণ করে pH মাত্রা কমিয়ে দেয়। কেউ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে এসব ব্যাকটেরিয়া মারা যেতে পারে, ফলে যোনিদেশে pH বেড়ে যায়। এ সুযোগে সেখানে Candida বা অন্যান্য অণুজীবের বংশবৃদ্ধি ঘটে ক্ষতরোগের সৃষ্টি করে।
৪. ত্বক কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ ও অভ্যন্তরীণ টিস্যুতে সংক্রমণের আশংকা বহুগুণ বেড়ে যায়। কাটা স্থান দিয়ে নির্গত রক্ত জমাট বেঁধে শুধু যে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে তাই না, বাইরে থেকে অণুজীব প্রবেশেও বাধা দেয়। দ্রুত ও আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এ প্রাকৃতিক চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকর।
৫. দেহের সিক্ত অংশগুলো সবসময় কোনো না কোনো ব্যাকটেরীয় সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে । অনেক অংশ আবার ব্যাকটেরিয়ানাশকও বহন করে, যেমন- অশ্রু, নাসিকাঝিল্ল ও লালায় লাইসোজাইম (lysozyme); সিমেনে স্পার্মিন (spermin); দুধে ল্যাক্টোপারঅক্সিডেজ (lactoperoxidase) ইত্যাদি।
৬. কানের ভিতরে সিরুমিনাস গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত সিরুমেন (cerumen) বা কানের মোম কানের গভীরে ধূলা-বালি, ব্যাকটেরিয়া ও ছোট পোকার প্রবেশ প্রতিরোধ করে । সিরুমিনাস গ্রন্থি কর্ণকুহরে এক ধরনের ত্বকীয় গ্রন্থি ।
Ai এর মাধ্যমে
১০ লক্ষ+ প্রশ্ন ডাটাবেজ
প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে ফেলো
উত্তর দিবে তোমার বই থেকে ও তোমার মত করে।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের অবস্থান যাচাই